এক্সক্লুসিভ

“আমার ছেলে একটা মুরগিও কাটতে পারত না। আর আজ আমি দেখলাম, ওর পুরো শরীর রক্তে ভেজা!”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। তার মা রেশমা আক্তার তুলে ধরেছেন তার ছেলের শেষ দিন, মৃত্যুর পরের নিপীড়ন, আর এক জননী শহিদের বুকফাটা কান্না।

“টিউশনি শেষ করে একটু তাড়াহুড়া করেই বের হয়ে গেল শান্ত। বলেছিল, পরদিন বেশি সময় পড়াবে। হঠাৎ করেই আমাকে বাসার চাবিটা দিয়ে গেল, যা কখনো দিত না।”

“ওইদিন পরোটা আর চা বানিয়ে রেখেছিলাম সন্ধ্যায় খাবে বলে। বাইরের খাবার ও খেতে পারত না। কিন্তু আর খাওয়া হয়নি।”

তার বন্ধুরা জানায়, শান্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছে। মেডিকেলে নেওয়া হয়। কিন্তু মা তখনো জানতেন না ছেলেটি মারা গেছে।

থানার ওসি যখন জিজ্ঞেস করছিল, “ফয়সালের আম্মু কোথায়?” তখন রেশমা ভাবছিলেন, শান্ত হাসপাতালে ওয়ার্ডে ভর্তি।

“সবাই আমাকে শান্তনা দিচ্ছিল। আমি কেবল বলছিলাম, ‘আমাকে আমার শান্তমণির কাছে নিয়ে যান। আমি শান্ত হয়ে যাব।’ কিন্তু কেউ নেয়নি।”

শেষমেশ মৃত্যুসংবাদ আসে। বিশ্বাস করতে পারেননি। মরদেহ দেখতে যাওয়ার সময়ও মনে করছিলেন, “যে আসবে, সে শান্ত না — শান্ত হয়তো কোথাও লুকিয়ে আছে।” কিন্তু স্ট্রেচারে ফিরেছিল তাঁর মানিকটাই।

এরপর পুলিশ শান্তর দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করে, এবং হত্যামামলায় তাদেরই অভিযুক্ত করে। চট্টগ্রামে জন্মানো ছেলেটার জানাজাও সেখানে করতে দেওয়া হয়নি — লাশ বরিশাল নিয়ে যাওয়া হয়।

“রমজানে তারাবি মিস করত না। কোথাও যেত না যেন নামাজ বাদ না পড়ে। আর এবার কেউ নেই খতম পড়ার।”

শেষে শান্তর মা বলেন—

“হয়ত আমি আর ওর রক্ষণাবেক্ষণের উপযুক্ত ছিলাম না, তাই আল্লাহ নিজের কাছে নিয়ে গেছেন। সান্ত্বনা একটাই—আল্লাহ যেন ওকে শহীদ হিসাবে কবুল করেন।”

“জীবন এখন আর আমার কাছে কিছু না। শুধু অপেক্ষায় আছি, কবে ছেলের কাছে চলে যাব।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button