আইন, ও বিচারভৌগলিকরাজনীতিরাজনীতিরাষ্ট্রনীতি

৫ই আগষ্ট ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ

এম এ মান্নানঃ

দেশে হঠাৎ করে আওয়ামিলীগের ভেরিফাইড ফেসবুকে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সেই দিনটা ছিলো  শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে সেটি ভাইরাল হয় এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের প্রতিহত করার জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার রাতেই পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। 

আওয়ামিলীগ মাঠে ফেরার চেষ্টা করলেও, তারা নূর হোসেন দিবসকে সামনে রেখে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দেয়। গত ১৬ বছর দেশে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে দিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। তার পর থেকে বিদেশ থেকে একের পর এক অডিও বার্তা দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারকে বিচলিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন।হঠাৎ আথলীগের কর্মসূচি ঘোষণার পর সব দল-মত ও পথের মানুষ এক হয়ে যায়। 

৫ আগস্টের পর পাল্টা প্রতি বিপ্লবের অপচেষ্টা করা হয়েছে। বিশেষ করে জুডিশিয়ালের নির্দেশ থেকে আনসার বিদ্রোহ, হঠাৎ করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থায় থাকা ফ্যাসিস্ট অনুসারীদের কথিত বৈষম্যেবিরোধী আন্দোলনের নামে রাজপথ দখল করে অস্থিতিশীল করা। বিদ্যুতের সাটডাউন কর্মসূচিসহ অসংখ্য দাবি পার্টির আগমন ঘটে। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজ বরাবরই তা রুখে দিয়েছে। ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট আথলীগের সে চেষ্টা ব্যর্থ করে দিলো।  

বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় দুই হাজার মানুষকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা করল। ২ লাখ মানুষকে রক্তাক্ত করল। এর বিচার হওয়া উচিত কি না? এই শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা, তার বিচার হওয়া উচিত কি না?

সংবাদকর্মীদের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন গত ১৬ বছরে আপনার যা বলার ছিল, যেটি প্রকাশ করার ছিল সেটি আপনারা করতে পারেননি। 

আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কোনো একটা সংবাদ যদি সরকারের বিপক্ষে যাবে বলে ডিজিএফআইয়ের মনে হতো, সেটি কিছু সময়ের মধ্যে পাল্টে যেত। আমরা চাই এই নতুন বাংলাদেশে, গত ১৬ বছর এবং শেষ ৩৬ দিনে যা হয়েছে, সেগুলো সাহস নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ভয় না নিয়ে আপনারা নির্দ্বিধায় তুলে ধরুন। 

সুশীল সমাজের প্রতি এই ছাত্রনেতা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সেই সুশীল সমাজের প্রতি আমাদের অনুরোধ যে সুশীল সমাজ বিগত ১৬ বছর ভুলে গিয়ে তিন মাস নিয়ে পড়ে আছে। যারা ১৬ বছর একদিকে কথা বলেছেন আর আজ একদিকে কথা বলছেন। আপনাদের কাছে আমাদের বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ, এই তিন মাসে যদি কোনো কমতি থাকে সেটি নিয়ে যেমন কথা বলবেন ওই ১৬ বছরে যে অপকর্মগুলো করা হয়েছে, যেগুলো আপনারা বলতে পারেননি। আপনারা সেই বিষয়গুলো নিয়ে এখন কথা বলবেন।

জিরো পয়েন্টে সবাই ছিল, আওয়ামিলীগ ছাড়া  কর্মসূচি ঘোষণা করলেও জিরো পয়েন্টের নূর হোসেন চত্বরে দেখা নেই আওয়ামিলীগের। সকাল থেকে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ ছাত্র-জনতা সেখানে অবস্থান করছেন। অবশ্য আওয়ামিলীগের বেশ কয়েকজন সমর্থককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছিল। 

(৮ নভেম্বর) ২৪ ইং নিজেদের ফেসবুক পেজে আওয়ামিলীগ ঘোষণা দেয়, রোববার বিকেল ৩টায় শহিদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে রাজধানীর জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ করবেন তারা। তারপর ওই পেজে টানা প্রচার চালানো হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুথদিন আলোচনার মূল কেন্দ্রে ছিল আথলীগের এ কর্মসূচি। 

(৯ নভেম্বর) শনিবার ২৪ ইং রাতে ফেসবুকে ছড়ানো হয়, বিভিন্ন জেলা থেকে আওয়ামিলীগের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকামুখি হচ্ছেন। এতে তৈরি হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। একই সঙ্গে জনমনেও ভীতি তৈরি হয়।

আওয়ামিলীগের এমন ঘোষণার পর পাল্টা কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা রোববার দুপুর ১২টা থেকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষণা অনুযায়ী, রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দুপুর ১২টা নাগাদ উপস্থিত হন কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। ছাত্র-জনতা দখলে নিয়ে ছিলেন পুরো জিরো পয়েন্ট এলাকা।

এদিকে, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে অবস্থিত আওয়ামিলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান  নেন বিএনপিথর কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। এ ছাড়া গুলিস্তান এলাকায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেয়।  

অন্যদিকে, বিকেল ৩টায় আওয়ামিলীগের কর্মসূচি থাকলেও নির্ধারিত সময়ে তাদের দেখা মিলেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে আওয়ামিলীগের ১২ জন নেতা-কর্মীকে গুলিস্তান এলাকায় আসতে দেখা গিয়ে ছিল । তাদের মধ্যে ৯ জন পুরুষকর্মী গণপিটুনির শিকার হন। মারধরের পর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ৩ জন ছিলেন নারী কর্মী, তারা বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ এলাকায় এসে আবার চলে যান।

দিনভর ঢাকার রাজপথ ছিল বিএনপিথর দখলে : ‘গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোসরদের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা এবং বিচারের দাবিতেথ রোববার রাজধানী জুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। সকাল থেকেই রাজধানীর সব প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে দলটির নেতা-কর্মীরা। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, তেজগাঁও, তিতুমীর, বাংলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশপাশের এলাকার দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের। এছাড়াও দলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণ করেন।

ঢাকার সব প্রবেশপথসহ বায়তুল মোকাররম, হাউজ বিল্ডিং, পল্টন মোড়, মুক্তাঙ্গন, সচিবালয় এলাকা, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, রামপুরা, নিউ মার্কেট, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, বনানী, গুলশান, তেজগাঁও, ফামগেট, পল্লবী এলাকায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা অবস্থান নেন। ক্ষণে ক্ষণে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আওয়ামিলীগ ও তার দোসরদের বিচারের দাবি জানান তারা। এ সময় ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফাথ-এর লিফলেট বিতরণ করা হয়।

ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চথ থেকে আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধের দাবি : আওয়ামিলীগকে নিষিদ্ধ ও বিচারের মাধ্যমে তাদের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানিয়েছে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ মঞ্চ। রোববার দুপুরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আয়োজনে গণজমায়েত ব্যানারে সমাবেশ করা হয়। ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ এই সমাবেশে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। বক্তারা বলেন, আওয়ামিলীগকে বিচার করতে হবে, যাতে কোনো ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, ‘আমরা নূর হোসেনকে ধারণ করে জুলাই বিপ্লব করেছি। কিন্তু আওয়ামিলীগ ইতিহাস ধ্বংস করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন রাষ্ট্র গঠনের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করছি, তখন দিল্লি­ বসে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। আমরা বর্তমান সরকারকে বলতে চাই, এই আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিচার করতে হবে। এমন বিচার করতে হবে, যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। যাতে কেউ মাথা চাড়া দিয়ে না উঠতে পারে।থ

কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, ‘স্বৈরাচারের জননী দিল্লি বসে ষড়যন্ত্র করছে। বাংলাদেশের রাজনীতির বড় একটি দিক দিল্লি কেন্দ্রিক, তাই আমরা শ্লোগান দেই দিল্লি না ঢাকা। এই আলোচনা সব সময় থাকবে। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাইফুল ইসলাম, ‘৫ আগস্ট স্বৈরাচারের বিষদাঁত উপড়ে ফেলেছি, তবে তিন মাস পর তারা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেশের মানুষ তাদের জায়গা দেবে না। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আশরেফা আক্তার বলেন, ‘মধ্যরাতের ভোট চোর, অর্থ চোর, তিনটি গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামিলীগ নাকি গণতন্ত্র উদ্ধার করতে আসবে! তাদের মতো এত নির্লজ্জ দল আর নেই! কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আকরাম হোসেন রাজ বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবে যে জনস্রোত দেখেছি সেটা যদি আমরা ধরে রাখতে পারি তাহলে তিন মাস না, তিনশত বছরেও কেউ শব্দ করতে পারবে না। কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, ‘১৯৮৭ সালে নূর হোসেন শহিদ হয়েছেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদ নিপাত যায়নি। ২০২৪ সালেও আবু সাইদরা শহিদ হয়েছেন, কিন্তু এখনো ফ্যাসিবাদ নিপাত যায়নি। আথলীগ অপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ নিপাত যাবে। তিতুমীর কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সুজন মিয়া বলেন, ‘আমাদের ভাইদের রক্তের ঋণ এখনো শোধ করতে পারিনি। এই রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে শহিদের রক্তের ঋণ শোধ করতে চাই।

জুলাই বিপ্লবে আহত আবু বক্কর বলেন, ‘আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আমাদের এখনো দিল্লির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে। শহিদেরা জীবন দিয়েছেন ক্ষমতার পালা বদলের জন্য না, রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।থ

সমাবেশে রাজনীতি বিশ্লেষক ফয়জুল হক বলেন, ‘যত দিন শিক্ষার্থীরা থাকবে ততো দিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। মুজিববাদের কোনো ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি মোঃ ইহসান বলেন, ‘আজকের পর থেকে সুশাসনের জন্য আর কেউ জীবন দিবে না, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত সুশাসন নিশ্চিত না হবে, রাষ্ট্র সংস্কার না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব। আমরা ৭২-এর সংবিধান মানি না। এই সংবিধান বাতিল করতে হবে।থ

এর আগে জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। দুপুরে মঞ্চে কবিতা পাঠ করেন সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ।

ট্রাম্পের ছবিসহ ঢাকায় অর্ধশতাধিক গ্রেফতার : সভাপ্রতি আওয়ামিলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের নির্দেশনা বাস্তবায়নকারীসহ ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপি মিডিয়া এ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) তালেবুর রহমান এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, সভাপ্রতি আওয়ামিলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপে তার দলের নেতা-কর্মীদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ব্যবহার করে অবৈধ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে সেই ছবি ও প্ল্যাকার্ড ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার নির্দেশ দেন।

 উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেগুলো ভাঙচুর ও অবমাননার ফুটেজ সংগ্রহের নির্দেশনা দেন। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিনষ্টের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে তারা এ অপতৎপরতার পরিকল্পনা করেছেন।  

ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এ পর্যন্ত এই কুচক্রী মহলের ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ উসকানিমূলক পোস্টার, ছবিসহ প্ল্যাকার্ড ও নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়।

আওয়ামিলীগের প্রকাশ্যে আসার অধিকার নেই : হাসনাত আবদুল্লাহ : গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যায় অভিযুক্ত আওয়ামিলীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এই গণহত্যার বিচার যতদিন নিশ্চিত না হবে ততদিন আওয়ামিলীগের প্রকাশ্যে কর্মসূচি পালনের কোনো অধিকার নেই বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

রোববার বিকেলে গুলিস্তানে জিরো পয়েন্টের কাছে ফ্যাসিবাদবিরোধী সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে যারা গণহত্যার সাথে জড়িত, যতদিন পর্যন্ত তাদের বিচার নিশ্চিত না হয় ততদিন তাদের জনসম্মুখে আসার কোনো অধিকার নেই। আওয়ামিলীগের বিচার লগি বৈঠা থেকে শুরু হতে হবে। তাদের নৃশংসতা দেখা গেছে পিলখানা হত্যাকাণ্ডে, শাপলা চত্বরে তারা অনেক আলেমকে রক্তাক্ত করে মেরেছে। আলেম সমাজকে দাড়ি টেনে টেনে তারা বায়তুল মোকাররম থেকে বের করে দিয়েছে। গত ১৬ বছরে ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে গুম, খুন, নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।

হাসনাত জানান, আওয়ামিলীগ ফিরবে তবে তারা বিচারের জন্য ফিরবে। গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামিলীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। দুই হাজার শহিদের রক্তের ওপর দিয়ে আওয়ামিলীগ পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে তাদেরও প্রতিহত করা হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে হাসনাত বলেন, হিন্দুস্থান বসে হুঙ্কার দেবেন আর গুলিস্তানে সংঘর্ষ করবেন, সেই সুযোগ ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের ছাত্রজনতা আপনাদের দেবে না। ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ প্রাসঙ্গিক কি প্রাসঙ্গিক না সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে গেছে ৫ আগস্ট।

আওয়ামিলীগ কোথাও মাথা তুলতে পারবে না : সারজিস  : বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আওয়ামিলীগ কোথাও মাথা তুলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।

তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের বিপ্লবী ভাইদের বলতে চাই নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো বিভাজনগুলো এক পাশে রেখে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি তাহলে এ রকম খুনি সংগঠন শুধু এই গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট নয়, বাংলাদেশের কোনো জায়গায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। পুরো বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্র-জনতার কাছে আমার এই অনুরোধটি থাকলো। যতদিন আপনাদের ভোটে একটি গণতান্ত্রিক সরকার না হচ্ছে, ততদিন ওই স্বৈরাচার হাসিনার উৎপাত দেখা গেলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় দুই হাজার মানুষকে শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য হত্যা করল। ২ লাখ মানুষকে রক্তাক্ত করল। এর বিচার হওয়া উচিত কি না? এই শেখ হাসিনা প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ডের হুকুমদাতা, তার বিচার হওয়া উচিত কি না?

সংবাদকর্মীদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, আপনারা নিশ্চয়ই একমত হবেন গত ১৬ বছরে আপনার যা বলার ছিল, যেটি প্রকাশ করার ছিল সেটি আপনারা করতে পারেননি। আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কোনো একটা সংবাদ যদি সরকারের বিপক্ষে যাবে বলে ডিজিএফআইয়ের মনে হতো, সেটি কিছু সময়ের মধ্যে পাল্টে যেত। আমরা চাই এই নতুন বাংলাদেশে, গত ১৬ বছর এবং শেষ ৩৬ দিনে যা হয়েছে, সেগুলো সাহস নিয়ে বিন্দুমাত্র কোনো ভয় না নিয়ে আপনারা নির্দ্বিধায় তুলে ধরুন। 

সুশীল সমাজের প্রতি এই ছাত্রনেতা অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সেই সুশীল সমাজের প্রতি আমাদের অনুরোধ যে সুশীল সমাজ বিগত ১৬ বছর ভুলে গিয়ে তিন মাস নিয়ে পড়ে আছে। যারা ১৬ বছর একদিকে কথা বলেছেন আর আজ একদিকে কথা বলছেন। আপনাদের কাছে আমাদের বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ, এই তিন মাসে যদি কোনো কমতি থাকে সেটি নিয়ে যেমন কথা বলবেন ওই ১৬ বছরে যে অপকর্মগুলো করা হয়েছে, যেগুলো আপনারা বলতে পারেননি। আপনারা সেই বিষয়গুলো নিয়ে এখন কথা বলবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button