কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে নোটিশকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বহাল তবিয়তে ট্রমা সেন্টারের ভবন

এম এ মান্নান, (অপরাধ বিচিত্রা) :
শর্তের বাইরে গিয়ে ভবন নির্মাণ কোনো নোটিশকে পাত্তা দিচ্ছে না কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার,জনমনে নানা এই ক্ষমতার জোর কোথায় সিটি কর্পোরেশনের নির্দেশকে
বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে ভবনটি।
২১ জুলাই ২০২৫, কুমিল্লা মহা নগরীর ব্যস্থতম এলাকায় অবস্থিত ট্রমা সেন্টার নামে একটি প্রাইভেট হাসপাতাল বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ও বহাল তবিয়তে ভবনটি এ বিষয় জানতে “” অপরাধ বিচিত্রা”র একটি চৌকস দল সরেজমিনে গিয়ে জানাযায় সিটি করপোরেশনের শর্ত অমান্য করে নির্মাণ করা হয়েছিল কুমিল্লা ট্রমা সেন্টার হাসপাতাল ভবনের কিছু অংশ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কতৃক অপসারণের চূড়ান্ত নোটিশের দুই মাস পার হলেও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি কতৃপক্ষ ।
সিটি কর্পোরেশন সুত্রে জানা যায় এর আগে তিন দফা নোটিশ দেওয়া হলেও নোটিশের ন্যূনতম জবাবও দেয়নি শর্ত ভঙ্গ করে ভবন নির্মাণ করা হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ। মোট চার দফায় দেওয়া নোটিশের সবগুলোকেই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন হাসপাতালটির ভবনের মালিক,ভবন মালিকের এমন সব আচরনে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম হচ্ছে এর আগে সদর আসনের (সাবেক) পলাতক সংসদ সদস্য বাহারের ক্ষমতা দেখিয়ে ছিলেন এখন আবার কার ক্ষমতায় সরকারি সড়কের উপর ভবনের কিছু অংশ থাকায় সিটি কর্পোরেশন কতৃক ভেঙে ফেলার জন্য নোটিশ করলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর হয়নি । এদিকে হাসপাতাল ভবন মালিকের দাবি, নোটিশ পাওয়ার পর সিটি করপোরেশনের চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু করা হয়েছে।
তিনি বলেন লিখিত জবাবও দেওয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনকে। অপরদিকে দৃশ্যত কোনো কাজ কিংবা নোটিশের জবাব পায়নি বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের ১৫ তলা ভবনের প্ল্যান পাস করা হয়। পাসকৃত প্ল্যানের শর্তসমূহ উপেক্ষা করেই ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করে কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নজরে এলে প্রথমে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর কুসিক/ প্রকৌ/ ২০১৭/ ২৬০৮ নম্বর স্মারকে প্রথম নোটিশ প্রদান করে সিটি করপোরেশন। সেটির কোনো জবাব দেয়নি ভবন কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে কুসিক/ প্রকৌ/ ২০১৯/ ৯৮৭/ (১) নম্বর স্মারকে দ্বিতীয়টি এবং একই বছর ৩০ এপ্রিল কুসিক/ প্রকৌ/ ২০১৯/ ১০৪৭ নম্বর স্মারকে তৃতীয় নোটিশ প্রদান করা হয়।
সবশেষ চলতি বছরের ২১ মে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূইয়া স্বাক্ষরিত ১৩৭২ নম্বর স্মারকে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হয়। চার দফা নোটিশ দেওয়া হলেও শর্তের বাইরে গিয়ে নির্মিত ভবনের অংশ ভাঙা তো দূরের কথা, নোটিশের নূন্যতম জবাবও দেয়নি ভবনটির মালিক।
চূড়ান্ত নোটিশটিতে বলা হয়, “”অপরাধ বিচিত্রা”” তদন্তে ও নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে আপনি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ হতে একটি ১১ তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক (পুরাতন ভবন) এবং দ্বিতীয়টি ১টি বেজমেন্ট ও ১৫ তলা আবাসিক কাম বাণিজ্যিক নতুন ভবন ইমারতের নকশা অনুমোদন নিয়ে বাস্তবে ইমারতের সীমানা থেকে সঠিক দূরত্ব না রেখে ইমারতের আকার, আকৃতি পরিবর্তন, পরিবর্ধন করাসহ সেট ব্যাক রুল না মেনে ইমারত নির্মাণ কাজ করেছেন এবং সূত্রাক্ত স্মারকে নোটিশ দেওয়া হলেও নোটিশের আদেশ বাস্তবায়ন করেননি যা অনুমোদিত নকশা বহির্ভূত অনুমোদনের শর্তাবলী ও অঙ্গীকারনামা লঙ্ঘনের সামিল। উল্লেখ্য, সম্মুখের স্থানে যত্রতত্রভাবে যানবাহন রেখে যানজট সৃষ্টি করছেন যা নগরবাসির ভোগান্তির উল্লেখযোগ্য কারণ।
এমতাবস্থায় এ নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে অনুমোদিত নকশায় বহির্ভূত নির্মিত ইমারতের অংশ স্বেচ্ছায় ভেঙে অপসারণ করে এ কার্যালয়ে লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য বলা হলো। অন্যথায় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক ইমারতের নকশা অনুমোদন বাতিল গ্যাস বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা সহ স্থানীয় সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এর বর্ণিত ধারা মতে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অবৈধ ইমারত নির্মাণ কাজ ইব্রাহিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভেঙে অপসারণ করা হবে যার সকল ব্যয়ভার আপনার নিকট থেকে আদায় করা হবে।
রোববার (২০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাসের শর্ত ভঙ্গ করে নির্মাণ করা ট্রমা সেন্টারের পাশাপাশি দুটি ভবন আগে যেমন ছিল ঠিক তেমনই অক্ষত আছে। সুতা পরিমাণও ভাঙা কিংবা পরিমার্জন করা হয়নি। হাসপাতালটির সামনে যত্রতত্র পার্কিং করে রাখা হয়েছে। যাতে দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে জনসাধারণকে।
অপরদিকে, সিটি করপোরেশনের দফায় দফায় দেওয়া নোটিশের কার্য্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া এবং নোটিশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনকে সমালোচনা করেছেন কুমিল্লার সচেতন মহল।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি আলমগীর খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন তো সিটি করপোরেশনের অনেক ক্ষমতা। সিটি করপোরেশন এখন আর কারও লেজুড়বৃত্তি করতে হয় না। দফায় দফায় দেওয়া নোটিশকে যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন সিটি করপোরেশনের উচিত আইনের মাধ্যমে সেই বৃদ্ধাঙ্গুলি ভেঙে দেওয়া। শুধু ট্রমা সেন্টারই নয়, নগরে যত অবৈধ ভবন আছে সবগুলোর ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করে নগরবাসীকে উদ্ধার করার অনুরোধ রইল আপনার (প্রতিবেদকের) মাধ্যমে।
কুমিল্লা ট্রমা সেন্টারের ভবনের মালিক ডা. আব্দুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে পাঠানো নোটিশ অনুযায়ী আমরা নির্দেশ পালন করে সিটি করপোরেশনকে অবহিত করেছি। আপনি সিটি করপোরেশনে গিয়ে খোঁজ নেন।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সায়েম ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ট্রমা সেন্টারের ভবন নির্মাণের অনিয়মের বিষয়টি চার দফা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারা কোনো রেসপন্স করেনি। সবশেষ নোটিশ দুই মাস আগে দেওয়া হয়েছে। আমাদের (সিটি করপোরেশনের) প্রতি দুই মাস পরপর ইমারত নির্মাণের বিষয়ে একটি মিটিং হয়। আগামী মাসে আমাদের সেই মিটিংটি হবে। চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে সেই মিটিংয়ে বিষয়টি উপস্থাপন করে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মাহফুজা মতিন অপরাধ বিচিত্রা’কে বলেন, সিটি করপোরেশন চাইলে জেলা প্রশাসন থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে সেখানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিটি করপোরেশন যখনই চাইবে তখনই সহযোগিতা করা হবে।
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।



