
অপরাধ বিচিত্রা ডেক্স ঃ বাংলাদেশর রাজধানী শহর ঢাকায় বিষাদ স্মৃতি নিয়ে ১২ দিন পর খুলল মাইলস্টোন স্কুল, স্মরণসভায় কান্না বিষাদ স্মৃতি নিয়ে ১২ দিন পর খুলল মাইলস্টোন স্কুল, স্মরণসভায় কান্না ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ১২ দিন পর আজ রোববার খুলেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুলের সীমানায় হারানো সহপাঠীদের ছবি দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
বহু আলোচনা সমালোচনা সহ যেখানে ছিল প্রাণচাঞ্চল্য, শিক্ষার্থীদের কোলাহল— সেই ক্যাম্পাসে আজ শোক, স্মরণ ও নীরবতা। ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ১২ দিন পর আজ রোববার খুলেছে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, তবে হয়নি কোনো ক্লাস-পরীক্ষা। কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয় এক আবেগঘন স্মরণসভা।
গত ২১ জুলাই কলেজ ভবনের ওপর একটি প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ বহু মানুষ নিহত ও আহত হন। এরপর থেকে বন্ধ ছিল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব কার্যক্রম।
আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে স্মরণসভা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনুষ্ঠানস্থলে ছিল কালো ব্যানার, নিহতদের ছবি, ফুল ও মোমবাতি। দুঃসহ স্মৃতির ভার যেন নীরবে বয়ে বেড়াচ্ছিল পুরো ক্যাম্পাস ঘীরে।
মাইলস্টোন কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন (অব.) জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘আমরা এখনও মানসিকভাবে এই দুর্ঘটনার ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তবে সবার সহযোগিতায় আবারও এগিয়ে চলার চেষ্টা করছি।’তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়েছে তাদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং সেশন চালু করা হয়েছে।’
কলেজের আরেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ জিয়াউল আলম সমকালকে জানান, আগামীকাল সোমবারও ক্লাস হবে না, তবে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করতে শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। নিয়মিত পাঠদান শুরু হবে বুধবার। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার উন্নয়নে আগামী তিন মাস কাউন্সেলিং কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কেউ নিখোঁজ নেই। যাদের তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি, তাদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে। নিহতদের তালিকা কলেজের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়েছে যাতে বিভ্রান্তি না থাকে।’
জিয়াউল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের মাইলস্টোন পরিবার এখন আহত। কিন্তু এই আঘাত সামলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই। যারা আমাদের পাশে থেকেছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। এই কঠিন সময়ে গুজব নয়, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যেতে চাই।’
তিনি জানান অপরাধ বিচিত্রা’কে বলেন আগামীকাল কলেজের পূর্বনির্ধারিত একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বেশির ভাগ অভিভাবক চান, শিক্ষার্থীরা যেন ধীরে ধীরে পড়াশোনায় ফিরে আসে।প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের পা পড়ে আজ। তবে তাদের চোখে-মুখে ছিল ভয়ের ছায়া ও বেঁচে থাকার বেদনা। শিক্ষার্থীরা নিঃশব্দ শোকযাত্রার মতো ফিরে এসেছেন পরিচিত শ্রেণিকক্ষে।
আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকেন। কিন্তু সেদিনের মতো আজ নেই কোনো কোলাহল, নেই প্রাণচাঞ্চল্য। সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গণে শুরু হয় মিলাদ মাহফিল ও শোকসভা। শ্রেণিকক্ষগুলোতে কিছু শিক্ষার্থীকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়। কথা বলছেন ধীরে, বিনিময় করছেন পারস্পরিক কুশলাদি।
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিরা বলে, ‘প্রতিদিন যে ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে ক্লাসে যেতাম, আজ সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ আর শূন্যতা। আজ ক্লাস হয়নি, এসেছি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে।’
দশম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলে, ‘আমার পাশের বাসার এক ছোট ভাই এখানে ক্লাস করতো। আন্টি ছোট ভাইয়াটাকে আমার সঙ্গে পাঠাতেন। আমি বড়, ওর খেয়াল রাখতে পারবো এজন্য। ও এখন বার্নে ভর্তি। এখনো সুস্থ না। এখানে এসে ওর কথা বারবার মনে পড়ছে।’
দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নওরোজ আফরিন বলেন, ‘কলেজে আসতে ভয় লাগছিল, তাও এলাম, আম্মু সঙ্গে এসেছে৷ পিচ্চিদের মুখগুলো চোখে ভাসছে। কান্না পাচ্ছে। এভাবে ওদের হারাতে হবে, তা কল্পনাও করিনি। হঠাৎ কী থেকে কী হয়ে গেলো, ভাবতেই পারছি না!’
কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা শাহ বুলবুল সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে, এ জন্য সীমিত পরিসরে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারছে, যা তাদের মানসিক প্রশান্তিতে সহায়তা করবে।’
তিনি আরও জানান, কলেজে বিমানবাহিনীর সহায়তায় একটি মেডিকেল ক্যাম্প চালু রয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ পাচ্ছেন। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে নিয়মিত কাউন্সেলিং করছেন। কেউ চাইলে ব্যক্তিগতভাবে একান্ত আলাপের সুযোগ পাচ্ছে।
শাহ বুলবুল বলেন, ‘এই দুঃসময়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সহানুভূতি ও মানবিকতা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠেছে।’



