যে সময়ে করা দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না: ২৮টি বিশেষ মুহূর্ত ও স্থান

দোয়া বা প্রার্থনা হলো মুমিনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার এবং আল্লাহর সাথে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম। আমরা সবসময়ই চাই আমাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পরম দয়ালু ও মেহেরবান, তিনি বান্দার দোয়া ফিরিয়ে দিতে ভালোবাসেন না। তবে কিছু নির্দিষ্ট সময়, স্থান, অবস্থা বা বিশেষ আমল রয়েছে, যখন বান্দার দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
আসুন, হাদীস ও কুরআনের আলোকে এমন ২৮টি বিশেষ মুহূর্ত ও স্থান সম্পর্কে জেনে নিই, যখন করা দোয়া আল্লাহ তাআলা ফিরিয়ে দেন না:
১. অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দু’আ: কোনো মুসলিমের অগোচরে অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য করা দু’আ আল্লাহ কবুল করেন। (মুসলিম – ৬৮২২)
২. জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুমের দু’আ: অত্যাচারীর বিরুদ্ধে নির্যাতিত ব্যক্তির দু’আ সরাসরি আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় এবং তা কবুল হয়। (তিরমিযী – ৩৪৪৮)
৩. বাবার দু’আ সন্তানের জন্য: পিতা তার সন্তানের জন্য যে দু’আ করেন, তা আল্লাহ কবুল করেন। (তিরমিযী – ৩৪৪৮)
৪. নেককার সন্তানের দু’আ বাবা-মায়ের জন্য: বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর নেককার সন্তানের করা দু’আ তাদের জন্য সদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কবুল হয়। (আবু দাউদ – ২৮৮০)
৫. আরাফাতের ময়দানে দু’আ: হজ্জের সময় আরাফাতের ময়দানে করা দু’আ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তিরমিযী – ৩৫৮৫)
৬. বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দু’আ: যখন কোনো বিপদগ্রস্ত বা অসহায় ব্যক্তি আন্তরিকভাবে আল্লাহকে ডাকে, তার দু’আ কবুল হয়। (সূরা নমল ৬২, সূরা গাফির ৬০, সূরা ইসরা ৬৭)
৭. সিজদারত অবস্থায় দু’আ: বান্দা যখন সিজদায় থাকে, তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়, তাই সিজদায় করা দু’আ কবুল হয়। (নাসায়ী – ১০৪৫)
৮. হজ্জের স্থানসমূহে দু’আ: আরাফাহ, মুজদালিফা, মিনা ইত্যাদি হজ্জের পবিত্র স্থানগুলোতে করা দু’আ বিশেষভাবে কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ – ২৮৯২)
৯. হজ্জ করা অবস্থায় হাজীর দু’আ: হজ্জব্রত পালনকালে হাজির যেকোনো দু’আ আল্লাহ কবুল করেন। (ইবনে মাজাহ – ২৮৯৩)
১০. উমরাহ করার সময় উমরাহকারীর দু’আ: উমরাহ পালনকারী ব্যক্তির দু’আ কবুল হয়। (নাসায়ী – ২৬২৫)
১১. আযানের পর দু’আ: আযানের সমাপ্তির পর যে দু’আ করা হয়, তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। (তিরমিযী – ২১০)
১২. জিহাদ বা ক্বিতাল চলাকালীন দু’আ: যখন আল্লাহর পথে যুদ্ধ বা ক্বিতাল চলে, সেই সময় করা দু’আ আল্লাহ কবুল করেন। (আবু দাউদ – ২৫৪০)
১৩. বৃষ্টি বর্ষণকালে দু’আ: বৃষ্টি বর্ষণের সময় রহমতের দ্বার খোলা থাকে, তাই এই সময়ে দু’আ কবুল হয়। (আবু দাউদ – ২৫৪০)
১৪. শেষ রাতের দু’আ / তাহাজ্জুদের সময়কার দু’আ: রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার দু’আ শোনেন। (বুখারী – ১১৪৫)
১৫. জুম্মার দিনে দু’আ: জুম্মার দিনে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, যখন করা দু’আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। বিশেষত আসরের শেষ দিকে এই মুহূর্ত তালাশ করার নির্দেশ আছে। (নাসায়ী – ১৩৮৯)
১৬. লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রির দু’আ: হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রাতে করা দু’আ নিশ্চিতভাবে কবুল হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
১৭. আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়কার দু’আ: আযান এবং ইকামতের মাঝের সময়টুকুতে করা দু’আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। (আহমাদ – ১৪৬৮৯, মুসলিম – ৬৬৮)
১৮. ফরয সালাতের শেষ অংশে দু’আ: সালাম ফিরানোর আগে সালাতের শেষ অংশে করা দু’আ কবুল হয়। (রিয়াদুস সালেহীন ১৫০৮, তিরমিযী – ৩৪৯৯)
১৯. মুসাফিরের দু’আ (সফর অবস্থায়): সফরকারী ব্যক্তির দু’আ আল্লাহ কবুল করেন। (তিরমিযী – ৩৪৪৮)
২০. রোজাদার ব্যক্তির দু’আ (রোজা অবস্থায়): রোজাদার ব্যক্তির ইফতারের আগ মুহূর্তে করা দু’আ কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ – ১৭৫২)
২১. ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু’আ: একজন ন্যায়পরায়ণ শাসকের করা দু’আ কবুল হয়। (তিরমিযী – ২৫২৬)
২২. দু’আ ইউনুস পাঠ করে দু’আ করলে: মাছের পেটে হযরত ইউনুস (আ.) যে দু’আ করেছিলেন (লাইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যালিমীন), তা পাঠ করে দু’আ করলে কবুল হয়। (তিরমিযী – ৩৫০৫)
২৩. ইসমে আযম (আল্লাহর মহান নাম) পড়ে দু’আ করলে: আল্লাহর ইসমে আযম ব্যবহার করে দু’আ করলে তা কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ – ৩৮৫৬)
২৪. বিপদে পতিত হলে বিশেষ দু’আ পাঠ: বিপদে পতিত হয়ে “ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” এবং “আল্লা-হুম্মা আজিরনী ফী মুসীবাতী ওয়া আখলিফ লী খইরাম মিনহা” এই দু’আ পাঠ করলে তা কবুল হয়। (মিশকাতুল মাসাবীহ – ১৬১৮, মুসলিম – ৯১৮)
২৫. জমজমের পানি পান করার পর দু’আ: বরকতময় জমজমের পানি পান করার পর যে দু’আ করা হয়, তা কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ – ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)
২৬. নির্যাতিতের দু’আ: উপরে উল্লেখিত মাজলুমের দু’আর মতোই, নির্যাতিত ব্যক্তির দু’আ কবুল হয়। (তিরমিযী – ৩৪৪৮)
২৭. মোরগের ডাক শুনে দু’আ: যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ চাইবে, কেননা সে একটি ফেরেশতা দেখেছে। (বুখারী (ফাতহুল বারীসহ), ৬/৩৫০, নং ৩৩০৩; মুসলিম, ৪/২০৯২, নং ২৭২৯)
২৮. দু’হাত তুলে দোয়া করা: আল্লাহ তাআলা বান্দার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ – ১৪৮৮)
এই বিশেষ সময় ও স্থানগুলোতে আমাদের উচিত আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন তুলে ধরা এবং তাঁর রহমত কামনা করা। প্রতিটি দু’আ যেন শুধু কথার কথা না হয়, বরং হৃদয় থেকে আসে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলের নেক দু’আ কবুল করুন এবং তাঁর রহমতের ছায়ায় রাখুন। আমিন।



