ইসলামী ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক হলেন ওমর ফারুক খান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) ও সিইও হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন মোঃ ওমর ফারুক খান। গত ৩ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে তিনি এই পদে যোগদান করেন। এর পূর্বে তিনি একই ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্বও পালন করেছেন।
দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ার
দীর্ঘ ৩৮ বছরের বর্ণাঢ্য ব্যাংকিং ক্যারিয়ারের অধিকারী মোঃ ওমর ফারুক খান ১৯৮৬ সালে ইসলামী ব্যাংকে সহকারী প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার ব্যাংকিং জীবন শুরু করেন। কর্মজীবনে তিনি তার দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে চকমোগলটুলী, পল্টন, সিলেট ও বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক এবং মতিঝিলে অবস্থিত লোকাল অফিসের ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সিলেট অঞ্চলের প্রধান এবং ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির (আইবিটিআরএ) প্রশিক্ষক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
তার কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পর্যায়ক্রমে ১৯৯৫ সালে প্রিন্সিপাল অফিসার, ১৯৯৯ সালে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, ২০০২ সালে এভিপি, ২০০৫ সালে ভিপি, ২০১০ সালে এসভিপি, ২০১৪ সালে ইভিপি, ২০১৭ সালে এসইভিপি, ২০১৯ সালে ডিএমডি এবং ২০২০ সালে অ্যাডিশনাল এমডি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। তিনি একজন দক্ষ ব্যাংকার এবং ফরেন এক্সচেঞ্জ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত।
শিক্ষাজীবন ও ব্যক্তিগত পরিচিতি
মোঃ ওমর ফারুক খান ১৯৬৩ সালের ৩১ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বামনী খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শামসুল ইসলাম খান এবং মাতার নাম তফুরা বেগম।
তিনি চরবামনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন এবং একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বরাবরই প্রথম স্থান অধিকার করতেন। তিনি ১৯৭৮ সালে রাখালীয়া হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ১৯৮০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে আইএ এবং ১৯৮২ সালে একই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৮৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। তার স্ত্রী শাম্মী আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তাদের একমাত্র কন্যা তুনাজ্জিনা রাহিমু কুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং একমাত্র পুত্র তানজিম বিন ফারুক বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডিতে অধ্যয়নরত। সম্প্রতি তিনি দাদা হয়েছেন।
সামাজিক ও পেশাগত কর্মকাণ্ড
মোঃ ওমর ফারুক খান পেশাগত জীবনের বাইরেও বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাগত সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, বন্ধু ‘৮৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং লক্ষ্মীপুর জেলা সমিতির আজীবন সদস্য। এছাড়াও তিনি নোফেল ব্যাংক অফিসার্স ফোরামের সহ-সভাপতি এবং তার পূর্বপুরুষদের প্রতিষ্ঠিত খাঁয়ের হাট কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জুমা মসজিদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষানুরাগী হিসেবে তিনি বামনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন।
তার কর্মজীবনের শুরুতে তিনি শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন এবং এরশাদ সরকারের আমলে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলেও সেসময় তিনি নিয়োগ পাননি।
একজন সৎ, মহৎ ও আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তার পরিচিতি রয়েছে। বই পড়া তার শখ এবং মানুষের কল্যাণ করাই তার জীবনের ব্রত।
ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মোঃ ওমর ফারুক খানের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, সততা ও প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে ইসলামী ব্যাংক পিএলসি তার গৌরবোজ্জ্বল অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।



