ঢাকা বিভাগপরিবেশবিভাগবিশ্লেষণ

৩২ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি হাওরের বনায়ন মহাপরিকল্পনা, হতাশ এলাকাবাসী

মোক্তার হোসেন গোলাপ, কিশোরগঞ্জ:

হাওর অঞ্চলের পরিবেশগত সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত একটি বনায়ন মহাপরিকল্পনা ৩২ বছর ধরে ফাইলবন্দী হয়ে আছে। ১৯৯২ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই পরিকল্পনার অনুকূলে সুস্পষ্ট মতামত দিলেও আজ পর্যন্ত এটি বাস্তবায়নে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা নিয়ে হাওরবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বিগত ১৯৯২ সালের ১৫ নভেম্বর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা রফিক ইসলাম হাওরবাসীর পক্ষ থেকে এই মহাপরিকল্পনার জন্য আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি হাওর অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে প্রশংসা করে এবং এর পক্ষে ইতিবাচক মতামত প্রদান করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বৃক্ষরোপণ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওরের ভাঙন ও ভূমির ক্ষয় রোধ হবে, মৎস্য সম্পদ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে, কাঠের চাহিদা পূরণ করবে এবং শুষ্ক মৌসুমে মাঠে কর্মরত কৃষক ও রাখালদের ছায়া দেবে। সে সময় বিশেষজ্ঞরা হাওরের জন্য উপযোগী ৩০টি প্রজাতির গাছের একটি তালিকাও প্রস্তুত করেছিলেন।

এরপর বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে পরিকল্পনাটি কেবল প্রশংসাই পেয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। একের পর এক সরকার পরিবর্তন হলেও হাওর অঞ্চলের ভাগ্য বদলায়নি।

অন্যদিকে, হাওর উন্নয়ন বোর্ড বছরের পর বছর ধরে প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকার পরও এই বোর্ডের কার্যক্রমে কোনো উল্লেখযোগ্য তৎপরতা চোখে পড়েনি। হাওরবাসীর প্রশ্ন, যেখানে পরিবেশ ও ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পে বিদেশি সংস্থাগুলো ঋণ বা অনুদান দিতে প্রস্তুত, সেখানে সরকার কেন নিজস্ব অর্থায়নে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে না?

বনায়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহল নীতিগতভাবে একমত হলেও, একটি সম্ভাবনাময় পরিকল্পনা ৩২ বছর ধরে অবহেলিত থাকায় এবং এটি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় হাওরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা ক্রমশ বাড়ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button