আইন ও বিচারজাতীয়দেশসংগঠন

হোটেলের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে গেছেন গোয়েন্দারা

এজাজ রহমান: আকস্মিক কক্সবাজার ভ্রমণ হঠাৎ হোটেল বদল করা নিয়ে নতুন জল্পনা, এনসিপির পাঁচ নেতাকে শোকজ কক্সবাজারে অবস্থানরত জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের হোটেল ঘিরে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। ইতোমধ্যে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে দিনভর কয়েক দফা বৈঠক করেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থার এমন তৎপরতার মধ্যে স্থান বদল করে এনসিপি নেতারা অন্য আরেকটি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন।

এদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে হঠাৎ করে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়া এনসিপির পাঁচ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে দলটি। সূত্র জানায়, বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করতে এনসিপির কয়েকজন নেতা কক্সবাজারে অবস্থান করছেন-এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এমনকি রয়েল টিউলিপ হোটেলের ভেতরে ও বাইরে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরে বুধবার হোটেলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যেহেতু বিদেশিদের সঙ্গে তাদের বৈঠক নিয়ে একটি গুজব রটেছে তাই ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য সিসি ক্যামেরা ফুটেজ নেওয়া হয়েছে।

আমরা এগুলো পর্যালোচনা করে দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত সেখানে সন্দেহজনক কোনো বিষয় দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রয়েল টিউলিপ হোটেলের নিরাপত্তা প্রধান লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে এনসিপি নেতারা এখানে ওঠার পর থেকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা হোটেলে এসে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তারা হোটেলের বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়েছেন। তবে বর্তমানে এনসিপি নেতারা আমাদের এখানে নেই। বুধবার দুপুরে তারা অন্যত্র চলে গেছেন। তিনি আরও বলেন, হোটেলে তাদের সঙ্গে (এনসিপি নেতাদের) কোনো বিদেশির বৈঠক হয়নি। এমনকি এই মুহূর্তে আমাদের এখানে কোনো বিদেশি গেস্টও নেই। বাইরে থেকেও কেউ এখানে আসেননি। এদিকে নানা আলোচনার মধ্যে বুধবার হোটেল পরিবর্তন করেন এনসিপি নেতারা। এদিন দুপুর পৌনে ১টার দিকে তারা শহরের আরেক অভিজাত হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসে গিয়ে ওঠেন।

এর আগে তাদের শহরের কলাতলী এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে দেখা যায়। জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) জসিম উদ্দিন বলেন, এনসিপি নেতারা এখন শহরের আরেকটি হোটেলে অবস্থান করছেন। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হোটেল ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, কক্সবাজার ভ্রমণের জন্য এলেও এনসিপি নেতাদের হোটেলের বাইরে খুব একটা দেখা যায়নি। হোটেলেই তাদের বেশির ভাগ সময় কাটছে। খুব শিগগিরই হয়তো তারা ঢাকায় ফিরে যাবেন। গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূতির দিনে মঙ্গলবার হঠাৎ এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতা কক্সবাজার ভ্রমণে যান। তারা হলেন-দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা এবং যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ।

হাসনাত-সারজিসসহ পাঁচ নেতাকে শোকজ : রক্তাক্ত জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়া এনসিপি নেতাদের কাছে এই সফরের ব্যাখ্যা চেয়ে পৃথক পৃথক চিঠিতে তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। বুধবার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের পক্ষে তাদের কাছে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দলের যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহউদ্দিন সিফাত। শোকজ প্রাপ্ত পাঁচজনই এনসিপির শীর্ষস্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতা। তারা হলেন-দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ (তাসনীম জারার স্বামী)।

নোটিশে বলা হয়, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের প্রথম বর্ষপূর্তি ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসে আপনি এবং দলের আরও চারজন কেন্দ্রীয় সদস্য ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজার গিয়েছেন। এই সফরসংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদের কাছে আগে অবগত করা হয়নি। এমন অবস্থায় আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণ ও প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের কাছে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’ মঙ্গলবার এনসিপির শীর্ষ পাঁচ নেতার আকস্মিক কক্সবাজার ভ্রমণে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ও আলোচনা তৈরি হয়। তারা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে সেখানে বৈঠক করতে গেছেন-এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য সেখানে অবস্থানরত এনসিপি নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয় কোনো বৈঠক নয়, এটি একান্ত তাদের ব্যক্তিগত ভ্রমণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button