
অধ্যাপক এম এ বার্ণিক: ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেখানোকে শহীদদের রক্তের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা বলে মন্তব্য করেছেন জ্ঞানভিত্তিক সামাজিক উদ্যোক্তা অধ্যাপক এম এ বার্ণিক। তিনি বলেন, সদ্য প্রকাশিত জুলাই ঘোষণাপত্রে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক শহীদদের সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দেখানো হয়েছে, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক।
অধ্যাপক বার্ণিক বলেন, “বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল গণজাগরণের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায় হলো ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান। এই বিপ্লব ছিল জনগণের আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার এক মহাকাব্য, যার প্রতিটি পাতা শহীদের রক্তে রঞ্জিত।”
তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ঘোষণাপত্রের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে শহীদের সংখ্যা “প্রায় এক হাজার” উল্লেখ করা হয়েছে। এটি জাতিসংঘের রিপোর্টে উল্লিখিত প্রায় ১,৪০০ শহীদের সংখ্যার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনও জাতিসংঘের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করে বলেন, সরকার শহীদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে।
অধ্যাপক বার্ণিক প্রশ্ন তুলে বলেন, “জাতিসংঘ যেখানে নির্ভরযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে দেড় হাজার শহীদের কথা বলছে, সেখানে প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শহীদের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার দুঃসাহস দেখালেন?” তিনি এটিকে নিছক ভুল নয়, বরং ইতিহাসের বিরুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “প্রায় পাঁচ শতাধিক শহীদকে অস্বীকার করা মানে তাদের আত্মত্যাগকে অসম্মান করা এবং জাতির ভবিষ্যৎ চেতনার ভিতকে দুর্বল করে দেওয়া। যে ঘোষণাপত্রটিকে জাতীয় ইতিহাসের দলিল হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে শহীদের সংখ্যা বিকৃতি রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।”
ড. ইউনূসের রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টার সমালোচনা করে অধ্যাপক বার্ণিক বলেন, “শহীদের রক্ত কোনো রাজনৈতিক বোঝাপড়ার বিষয় নয়। শহীদরা জাতির অভিভাবক, তাদের সংখ্যা গোপন করা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।”
এ বিষয়ে তিনি কয়েকটি সুস্পষ্ট দাবি তুলে ধরেন:
- অবিলম্বে এই সংখ্যা বিকৃতি সংশোধন করতে হবে।
- অন্যথায়, জাতি এই ঘোষণাপত্র প্রত্যাখ্যান করবে।
- শহীদদের রক্ত কাগজে মুছে ফেলা যাবে না, তারা ইতিহাসের অনড় সাক্ষী।
- আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি পূর্ণাঙ্গ শহীদ তালিকা প্রকাশ করে তা সংবিধানে সন্নিবেশিত করতে হবে।
অধ্যাপক বার্ণিক তার বক্তব্যে জোর দিয়ে বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদদের আত্মত্যাগই সর্বোচ্চ মাপকাঠি। সেই মাপকাঠিকে অবজ্ঞা করে কেউ নেতা হতে পারে না। যারা শহীদের রক্তে দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় বসেছে, তাদের দায়িত্ব শহীদের সংখ্যা লুকানো নয়, বরং তাদের মর্যাদা ও উত্তরাধিকার নিশ্চিত করা।”
উল্লেখ্য, গত ৫ই আগস্ট, ২০২৫, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন, যেখানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ঘোষণাপত্রটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন এটিকে ‘তামাশা’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা অন্তর্ভুক্ত না করায় এটিকে বর্জনের হুমকি দিয়েছেন।



