সন্ত্রাসবাদের দায় কার? ইতিহাসের আয়নায় এক ভিন্ন চিত্র

ভূমিকা:
বর্তমান বিশ্বে প্রায়শই ইসলাম এবং মুসলিমদের সহিংসতা ও সন্ত্রাসবাদের সমার্থক হিসেবে চিত্রিত করার একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক সূচক এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর দিকে তাকালে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। এই লেখায় কিছু পরিসংখ্যান ও ঐতিহাসিক সত্য তুলে ধরে এই প্রচলিত ধারণার অসারতা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে।
সামাজিক সূচক ও অপরাধের পরিসংখ্যান
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রিপোর্টের আলোকে বিশ্বের কিছু সামাজিক ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে নজর দেওয়া যাক, যেখানে শীর্ষস্থানে থাকা দেশগুলোর প্রধান ধর্মীয় অনুষঙ্গও উল্লেখ করা হলো:
** পতিতাবৃত্তিতে শীর্ষ দেশ:**
১. থাইল্যান্ড (বৌদ্ধধর্ম)
২. ডেনমার্ক (খ্রিস্টধর্ম)
৩. ইতালি (খ্রিস্টধর্ম)
৪. জার্মানি (খ্রিস্টধর্ম)
৫. ফ্রান্স (খ্রিস্টধর্ম)
৬. নরওয়ে (খ্রিস্টধর্ম)
৭. বেলজিয়াম (খ্রিস্টধর্ম)
৮. স্পেন (খ্রিস্টধর্ম)
৯. যুক্তরাজ্য (খ্রিস্টধর্ম)
১০. ফিনল্যান্ড (খ্রিস্টধর্ম)
চুরির হারে শীর্ষ দেশ:
১. ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড (খ্রিস্টধর্ম)
২. জিম্বাবুয়ে (খ্রিস্টধর্ম)
৩. অস্ট্রেলিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
৪. কানাডা (খ্রিস্টধর্ম)
৫. নিউজিল্যান্ড (খ্রিস্টধর্ম)
৬. ভারত (হিন্দুধর্ম)
৭. ইংল্যান্ড ও ওয়েলস (খ্রিস্টধর্ম)
৮. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (খ্রিস্টধর্ম)
৯. সুইডেন (খ্রিস্টধর্ম)
১০. দক্ষিণ আফ্রিকা (খ্রিস্টধর্ম)
অ্যালকোহল আসক্তিতে শীর্ষ দেশ:
১. মোলডোভা (খ্রিস্টধর্ম)
২. বেলারুশ (খ্রিস্টধর্ম)
৩. লিথুয়ানিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
৪. রাশিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
৫. চেক প্রজাতন্ত্র (খ্রিস্টধর্ম)
৬. ইউক্রেন (খ্রিস্টধর্ম)
৭. অ্যান্ডোরা (খ্রিস্টধর্ম)
৮. রোমানিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
৯. সার্বিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
১০. অস্ট্রেলিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
খুনের হারে শীর্ষ দেশ:
১. হন্ডুরাস (খ্রিস্টধর্ম)
২. ভেনেজুয়েলা (খ্রিস্টধর্ম)
৩. বেলিজ (খ্রিস্টধর্ম)
৪. এল সালভাদর (খ্রিস্টধর্ম)
৫. গুয়াতেমালা (খ্রিস্টধর্ম)
৬. দক্ষিণ আফ্রিকা (খ্রিস্টধর্ম)
৭. সেন্ট কিটস ও নেভিস (খ্রিস্টধর্ম)
৮. বাহামা (খ্রিস্টধর্ম)
৯. লেসোথো (খ্রিস্টধর্ম)
১০. জামাইকা (খ্রিস্টধর্ম)
বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সন্ত্রাসী দল:
- ইয়াকুজা (নির্দিষ্ট ধর্ম নেই)
- আগ্বেরাস (খ্রিস্টধর্ম)
- ওয়াহ সিং (খ্রিস্টধর্ম)
- জামাইকান পসি (খ্রিস্টধর্ম)
- প্রাইমেরো (খ্রিস্টধর্ম)
- দ্য আরিয়ান ব্রাদারহুড (খ্রিস্টধর্ম)
বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাদক চক্রের হোতা:
- পাবলো এসকোবার – কলম্বিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
- আমাদো ক্যারিলো ফুয়েন্তেস – মেক্সিকো (খ্রিস্টধর্ম)
- কার্লোস লিডার – জার্মানি (খ্রিস্টধর্ম)
- গ্রিসেল্ডা ব্ল্যাঙ্কো – কলম্বিয়া (খ্রিস্টধর্ম)
- হোয়াকিন গুজম্যান – মেক্সিকো (খ্রিস্টধর্ম)
- রাফায়েল কারো কুইন্টেরো – মেক্সিকো (খ্রিস্টধর্ম)
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সহিংসতার দায়
এবার কিছু ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক:
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ কারা শুরু করেছিল?
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য দায়ী কারা?
- প্রায় ২০ মিলিয়ন স্থানীয় অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে কারা হত্যা করেছে?
- জাপানের নাগাসাকি এবং হিরোশিমায় আণবিক বোমা নিক্ষেপ কারা করেছিল?
- দক্ষিণ আমেরিকায় প্রায় ১০০ মিলিয়ন এবং উত্তর আমেরিকায় প্রায় ৫০ মিলিয়ন রেড ইন্ডিয়ানদের কারা হত্যা করেছে?
- আফ্রিকা থেকে ১৮০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে ক্রীতদাস হিসেবে কারা অপহরণ করেছিল, যাদের ৮৮ শতাংশ পথেই মারা যায়?
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এসব ভয়াবহ ঘটনার কোনোটির সাথেই মুসলিমরা চালকের আসনে ছিল না।
উপসংহার: একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র?
পরিসংখ্যান ও ইতিহাস প্রমাণ করে, সন্ত্রাসবাদ কিংবা জঙ্গীবাদের সূচনা মুসলিমদের হাতে হয়নি। অথচ সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে মুসলিমদেরকেই। যখন কোনো অমুসলিম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে, তখন তাকে কেবলই একজন “অপরাধী” বলা হয়। কিন্তু যখন কোনো মুসলিম তার অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করে, তখন তাকে “সন্ত্রাসী” আখ্যা দেওয়া হয়।
এটি একটি সুস্পষ্ট এবং সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্দিষ্ট কোনো মহল চায়, বিশ্ববাসী যেন ইসলাম ও মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদের কারণ হিসেবেই বিশ্বাস করে। আর এই খেলাতেই যেন মেতে আছে বিশ্বের তথাকথিত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো।



