চট্টগ্রাম বিভাগ

সোনালী ব্যাংক বৃহত্তর  চট্টগ্রাম অঞ্চল এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেটের কব্জায় জিম্মি

মুহাম্মদ জুবাইর:  দেশের জাতীয় গুরুত্বপুর্ন বহু প্রতিষ্ঠান থেকে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসরদের বাদ দিয়ে সংস্কার করা হলেও এখনো সোনালী ব্যাংক বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চল আওয়ামী লীগের কব্জায় রয়ে গেছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বড় বড় পদ ভাগিয়ে নেওয়া আওয়ামী লীগের দোসররা সেখানে একদিকে ঋনখেলাপিদের আগের মতো বাঁচানোর ফন্দি করছেন। পাশাপাশি খোলস পাল্টে ক্ষমতা পোক্ত করার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। এই অবস্থায় বৈষম্যের শিকার হাজারো কর্মচারী ফুঁসে উঠেছেন। সোনালী ব্যাংকে এই ফ্যাসিস্ট দোসরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছে সৎ নিরীহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

২০০৮ সালে ক্ষমতা আরোহনের পর থেকে প্রশাসন আওয়ামীকরনের অংশ হিসেবে সোনালী ব্যাংকের প্রতিটি নিয়োগ, বদলি ও গুরুত্বপূর্ণ পদায়নের ক্ষেত্রে সাবেক ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। 

 গত ১৬ বছরে এই চট্টগ্রাম মহানগরেরর সোনালী ব্যাংক ও ব্যাংকের বিভিন্ন ডিভিশন সমুহ বঙ্গবন্ধু পরিষদ চট্টগ্রাম অঞ্চল ও স্বাধীনতা  স্বপক্ষীয় ব্যাংকার ফোরামের নেতা  বা আওয়ামী লীগ নেতাদের আত্মীয় স্বজনের বাইরে কাউকে বদলি/ পলায়ন করা হয়নি। যখন যে জেনারেল ম্যানেজার ( জিএম) এসেছেন তিনি তার পদ রক্ষার জন্য নিজস্ব আওয়ামী বলয় তৈরি করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়,  সোনালী ব্যাংক বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে আওয়ামী আমলে নিয়োগকৃত আপাদমস্তক আওয়ামী দোসর জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম সাউথ এর জিএম (ইনচার্জ ) মোঃ ফোরকান  বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতৃবৃন্দকে দিয়ে জিএম অফিস, প্রিন্সিপাল অফিস, বিভিন্ন শাখা অফিসগুলোকেও নিজেদের আয়ত্তে রেখেছেন। এছাড়াও তিনি নিজেদের বলয়কে স্থায়িত্ব দিতে সম্প্রতি জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম (নর্থ)  এর জিএম মোঃ মুসা খানকে বঙ্গবন্ধু পরিষদকে লালন পালনের অভিযোগ তুলে চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করার নানা  ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। যদিও বঙ্গবন্ধু পরিষদ কমিটি গঠিত হয়েছিল জিএম মুসা খান চট্টগ্রাম যোগদানের পূর্বে।  উল্লেখ্য  এক সময় মংহলা সিং ও  সৈয়দ আলমের  নেতৃত্বে গঠিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিজের কুক্ষিগত করতে পর্দার আড়ালে থেকে এজিএম, জান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহকে সভাপতি,  এজিএম খালিদ রশিদকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এজিএম রানা অমিতাভ দাশকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি গঠন করেন। যে কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহ দেওয়া হয় ফোরকান অনুগত আরিফা আফরিন, এবিএম খালেদুজ্জামান , সুচন্দ্রা চৌধুরী, মিন্টু রাম দাস,  মূলকুতুবুর রহমান,  উজ্জ্বল কান্তি দে,চন্দন চক্রবর্তী,  মোহাম্মদ আজগর আলী, মোস্তফা নাজমুল কাউসার, শুভাশীষ ঘোষকে । তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের আরেকটি নতুন কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে হাতের মুঠোয় নেন। তাদের যোগ্য সহযোগী হিসেবে কলকাঠি নাড়েন জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম (সাউর্থ) এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাশেদুল ইসলাম। যে  রাশেদুল ইসলামের ক্ষমতার দাপটে দীর্ঘ ১৫ বছর ভাড়া পরিশোধ না করে আগ্রাবাদস্থ  ব্যাংক কলোনির একটি বিল্ডিং এ অবস্থান করেছিলেন।  এছাড়াও তিনি প্রতিটি ফাইলে মোটা অংকের উৎকোচ। ব্যক্তিগত তিন তিনটি বাড়ির মালিক বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাব খাটিয়ে হয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ বৃত্তের মালিক।

সংশ্লিষ্ট সুত্র আরো‌ জানায়, সোনালী ব্যাংক জেনারেল ম্যানেজারসহ অফিস চট্টগ্রাম সাউথ এর জিএম (ইনচার্জ ) মোঃ ফোরকান  ক্ষমতার দাপটে ডিজিএম হয়ে বসেন জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম সাউথ এর জিএম (ইনচার্জ ) এর আসনে। ফোরকান  প্রধান কার্যালয়ের PRD এর এজিএম পারভেজকে  দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নিরীহ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারেও লিপ্ত। 

এছাড়াও এজিএম,  জান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ সহ সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমিটির প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মী ও স্বৈরাচার দোসর অনেকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চট্টগ্রাম নগরের জিএম অফিস, প্রিন্সিপাল অফিস, বিভিন্ন শাখা অফিসগুলোতে কর্মরত আছেন। 

অভিযোগ আছে আওয়ামী সিণ্ডিকেটের অন্যতম হোতা জান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ দীর্ঘ দিন আওয়ামী প্রভাব খাটিয়ে নিজের মন মত  পোস্টিং নিয়ে কাটিয়েছেন। চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যাংকের নানা  শাখায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের লোকদের পদায়নের প্রধান হোতা তিনি। জান মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। 

স্বৈরাচার সরকারের পতনের এক বছর পরেও তিনি কিভাবে কলকাঠি নাড়ছেন তা সকলের মনে প্রশ্ন। 

অপরদিকে আরেক স্বৈরাচার দোসর সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফা আফরিনের বিরুদ্ধে রয়েছে পাহাড়সম দুর্নীতির অভিযোগ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা জনকে সুবিধা পাইয়ে দিয়ে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক। সম্প্রতি তিনি ১০ কোটি টাকা অনৈতিক লেনদেনের জন্য সাসপেন্ড হয়েছেন। 

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরির্বতন হলেও বহাল তবিয়তে আছেন সোনালী ব্যাংক পাঁচলাইশ শাখার ম্যানেজার এজিএম মোঃ মলকুতুর রহমান। যিনি সোনালী ব্যাংকের যোগদানের পর থেকে ঘুরে ফিরে আছেন চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন শাখায়। গত ১৫ বছরে আওয়ামী পন্থী দের সুবিধা দেওয়াসহ, ব্যাংক লোন পাশের ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম করেছেন তিনি। এছাড়াও সুবিধা নিয়ে পাশ করেছেন ব্যাংক লোন। এখনো তিনি স্বৈরাচারের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। 

দেওয়ান হাট মিঠা গলি শাখার ম্যানেজার মোহাম্মদ আজগর আলী গত ১৬ বছরে কাটিয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায়। দায়িত্ব পালন করেছেন সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে।  আওয়ামীপন্থী এই কর্মকর্তার  দাপটে অসহায় হয়ে আছেন গত পদ বঞ্চিতরা। তাঁর  বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

আরেক আওয়ামীপন্থী এই কর্মকর্তা সোনালী ব্যাংক ধনিয়ালা পাড়া শাখার ম্যানেজার এ বি এম খালেদুজ্জামান সোনালি ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের ওপর ভর করে বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ ১৬ বছর দাপটের সাথে নগরীর ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় কাটানো খালেদুজ্জামান এখনো মুর্তিমান এক আতংকের নাম। 

সোনালী ব্যাংক জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম (নর্থ) এ কর্মরত মোস্তফা নাজমুল কাউসার জেনারেল ম্যানেজারস অফিস চট্টগ্রাম সাউথ এর জিএম (ইনচার্জ ) মোঃ ফোরকানের বিশেষ পছন্দের এবং তার পদায়নও হয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উপদেষ্টা গোপাল চন্দ্র গোলদার। সোনালী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য প্রযুক্তি ও গবেষণা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে। তার কার্যকলাপ দেখলে মনে হয় এখনো আওয়ামী ক্ষমতায় আছে। বিগত দিনে ক্ষমতার দাপট যেভাবে দেখিয়েছে ঠিক এখনো ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছেন।

বাংলাদেশের ওয়াল স্ট্রিট ও  দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে ব্ড় বাজার খাতুনগঞ্জ শাখার ম্যানেজার শুভাশীষ ঘোষ আওয়ামীপন্থী একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থনকারী হিসেবে পরিচিত হয়েও বহাতবিয়তে প্রতিদিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন হওয়া শাখায়। যার দাপটে একসময় সাধারণ কর্মচারীরা তটস্থ ছিলেন। বর্তমানে তিনি স্বৈরাচার সরকারের প্রভাব বিস্তার করছেন।

সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর এসপিও সূচন্দ্রা চৌধুরী বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ সভাপতি পদে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তার করেছেন সোনালী ব্যাংকে। গড়েছেন অবৈধ অর্থ বৃত্তের পাহাড়। 

সোনালী ব্যাংক পটিয়া শাখার এজিএম উজ্জ্বল কান্তি নাথ ও সূচন্দ্রা চৌধুরী মত বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ সভাপতি পদে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে প্রভাব বিস্তার করেছেন সোনালী ব্যাংকে।

এছাড়াও সোনালী  বঙ্গবন্ধু পরিষদ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ-সভাপতি  খোরশেদ আলম, এ কে এম আহসান আরিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান তারেক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রানী দাশ, অর্থ সম্পাদক সুমন কুমার নাথ, দপ্তর সম্পাদক আসাদ আলী, প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক আবুল হাসনাত মোঃ আব্দুল্লাহ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক শিপ্রা রানী মজুমদার, সহ মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আঁখি বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্পিতা বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক তাসনিম, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক জুয়েল পান্থ, ক্রীড়া সম্পাদক রাজীব রায় চৌধুরী, আপ্যায়ন সম্পাদক জিয়াউদ্দিন চৌধুরী, কার্যনির্বাহী সদস্য সাইফুর রহমান, মোহাম্মদ আসাদ, সত্যপ্রিয় বড়ুয়া, তাজুল ইসলাম, রাজন কান্তি দাশ, মিন্টু রাম দাশ, সুভাষ কুমার চৌধুরী,   সঞ্জীব দে, এস এম শওকত ওসমান, মনিরুল ইসলাম, সাজ্জাদুল ইসলাম শিবলু, আশেক হোসেন চৌধুরী, সৈয়দ মোঃ জিয়া উদ্দিন, যাদব চন্দ্র দাশ, সাজ্জাদ হোসেন, শেখ মেহেদী রেজা, ফয়েজ উল্ল্যাহ বাহার, আবু জাহেদ, নুর উদ্দিন মিয়া, শরীফ উদ্দিন, হুমায়ূন কবির রিপন, জুয়েল রানা, এ টি এম বখতিয়ার, আব্দুল কাদের, সোলাইমান, আব্দুল মালেক, আবুল কালাম আজাদ, কবির হোসেনসহ সোনালী ব্যাংক স্বাধীনতা স্বপক্ষীয় ফোরামের সকলে ও অনেক স্বৈরাচার দোসর এখনো সোনালী ব্যাংক চট্টগ্রাম জিএম অফিস, প্রিন্সিপাল অফিস, বিভিন্ন শাখা অফিসগুলোতে কর্মরত। যারা প্রত্যেকে ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে সক্রিয়।

এদিকে সোনালি ব্যাংক বঙ্গবন্ধু পরিষদের ওপর ভর করে বিভিন্ন অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে যারা পছন্দের শাখায় চাকরি করে আসছে, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ এখন জিয়া পরিষদে ঠাঁই নিতে মরিয়া। 

সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন সকল স্বৈরাচার দোসরদের রাহুগ্রাস থেকে অচিরেই সোনালী ব্যাংক বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলকে মুক্ত করা না গেলে  চট্টগ্রামে যেকোনো সময় সোনালী ব্যাংক সেক্টরে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তাদের দাবী অচিরেই চট্টগ্রাম থেকে এই আওয়ামী দোসরদের বদলি করা না হলে  প্রধান কার্যালয় সহ প্রত্যেকটি অঞ্চলে এর প্রভাব পড়তে পারে।

ধারাবাহিক পর্বের প্রথম পর্ব ( ১)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button