
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক:
রাজধানীর ডেমরায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা নিরসনে অবশেষে এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবোর নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ এবং উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল আলম রাজীবের নেতৃত্বে পরিচালিত এই উদ্যোগে এলাকার মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। ভূমিদস্যু ও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের দখলে থাকা খালের জায়গা উদ্ধার করে খননকাজ শুরু হওয়ায় এই দুই কর্মকর্তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানা এলাকার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বছরের পর বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬৪, ৬৫ ও ৬৬ নং ওয়ার্ডসহ বিস্তীর্ণ এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান মাধ্যম এই খালগুলো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা দখল এবং মানবসৃষ্ট বর্জ্যে ভরাট হয়ে গিয়েছিল। ফলে কোনাপাড়া, ফার্মের মোড়, শান্তিবাগ, বানিয়ারবাগ, মেডিকেল রোড, মুসলিম নগর, দক্ষিণপাড়া, রায়েরবাগ, মেরাজনগর ও মোহাম্মদ বাগসহ শতাধিক মহল্লায় সামান্য বৃষ্টিতেই কোমর সমান পানি জমে যেত। এতে কর্মজীবী মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছিল।
দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি থেকে ছড়াচ্ছিল নানা রোগ। এডিস মশার লার্ভার প্রজনন ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার পাশাপাশি ওয়াসার সরবরাহ লাইনে দূষিত পানি মিশে যাওয়ায় কলেরা, টাইফয়েড ও আমাশয়ের মতো রোগের প্রকোপও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে গিয়েছিল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত কর আদায় করলেও বর্জ্য অপসারণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। গত ৩১ জুলাই ‘দ্য নিউ নেশন’ পত্রিকায় সাংবাদিক নাজমুল হাসান এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করলে বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নজরে আসে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, “এই নিষ্কাশন খালটি সংস্কারের ফলে আশা করছি জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।”
মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃ-স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ এমদাদুল হক পানি উন্নয়ন বোর্ডের গৃহীত এই কর্মসূচির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মাতুয়াইল আইসিএমএইচ-এর নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী আফিজ উদ্দিন বলেন, “দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা নিরসনে নিষ্কাশন খাল খনন করায় এলাকাবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।”
বর্তমানে স্কেভেটর দিয়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং ট্রাক দিয়ে খালের আবর্জনা অপসারণের কাজ পুরোদমে চলছে। অসম্ভবকে সম্ভব করার এই প্রচেষ্টায় প্রশাসন ও এলাকাবাসী উভয়েই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। এই খাল খনন সম্পন্ন হলে প্রায় ২০ লক্ষ নগরবাসী জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।



