মিঠামইনে বিএনপির সন্ত্রাসবিরোধী সভায় আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতি: সমালোচনার ঝড়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিষয়টিকে ‘রাবণের মুখে রাম নাম’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুখলেছুর রহমান ভূঁইয়া, যিনি ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের অভিযোগে চারটি মামলার আসামি, তাকেই বিএনপি নেতা নাজমুল ভূঁইয়ার আয়োজনে সন্ত্রাসবিরোধী সভায় প্রধান অতিথি করা হয়। এই সমাবেশে মুখলেছুর রহমানের বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন অনেকে।
জানা গেছে, গত ৮ আগস্ট মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন বিএনপি শাখার সভাপতি নাজমুল হাসান ভূঁইয়ার উদ্যোগে চৌধুরী বাজারে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকবিরোধী এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেই সমাবেশেই প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখলেছুর রহমান ভূঁইয়া। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি নেতা নাজমুল ভূঁইয়ার আমন্ত্রণেই তিনি সভায় যোগ দেন।
মুখলেছুর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে চারটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তিনি জামিনে থাকলেও রামপুরা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় (মামলা নং-১৯, তারিখ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) তিনি এখনো জামিন নেননি বলে জানা গেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঘাগড়া বাজারের সরকারি জমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সিহারা গ্রামের হাজেরা বেগম নামে এক বিধবা নারীসহ আটজন তার বিরুদ্ধে ভূমি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর আওতায় আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিলে, তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘাগড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত মিরজাহান মোমিনীর ভাই-ভাতিজাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান ভূঁইয়া। নিজের প্রভাব বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তিনি আওয়ামী লীগ নেতা মুখলেছুর রহমানকে এই সমাবেশে প্রধান অতিথি করেন। উল্লেখ্য, মুখলেছুর রহমান ভূঁইয়া ডিবি প্রধান হারুনের চাচা এবং ঘাগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
সমাবেশে হেলিম মেম্বার হত্যা মামলার পলাতক প্রধান আসামি আক্তার মেম্বার এবং ছাত্র আন্দোলনে হামলার মামলার আসামি দ্বীন ইসলামসহ আরও বেশ কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সমাবেশ শেষে নাজমুল হাসান ভূঁইয়া তার নিজের ফেসবুক আইডিতে সমাবেশের ভিডিও পোস্ট করলে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই মন্তব্য করে বলছেন, ‘রাবণের মুখে রাম রাম’ বলাটা শোভা পায় না। বিষয়টি নিয়ে সর্বমহলে হাস্যরস ও তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ বিষয়ে মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহেদুল আলম জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এই সমাবেশটি দলের কোনো কর্মসূচি ছিল না, এটি নাজমুল ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত আয়োজন। তিনি আরও বলেন, “চিহ্নিত অপরাধীদের নিয়ে সমাবেশ করা দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী। দলের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার দায়ে তার বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



