অর্থনীতিকৃষিবার্তাচুয়াডাঙ্গাজাতীয়পরিবেশবাংলাদেশ

চুয়াডাঙ্গার ব্র্যান্ড ব্ল্যাক বেঙ্গল: হাজার কোটি টাকার অর্থনীতি ও হাজারো নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

আলমগীর হোসেন শিশির

চুয়াডাঙ্গার গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নীরব বিপ্লব ঘটিয়েছে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল। সহজ পালন পদ্ধতি, কম খরচ এবং অধিক লাভের কারণে এই ছাগল এখন জেলার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এর মাংস ও চামড়া বিক্রি করে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় হাজার কোটি টাকা, যা বদলে দিচ্ছে হাজারো মানুষের ভাগ্য, বিশেষ করে প্রান্তিক নারীদের।

কেন ব্ল্যাক বেঙ্গল পালনে এত জনপ্রিয়তা?

চুয়াডাঙ্গার উষ্ণ আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ব্ল্যাক বেঙ্গল পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এর জনপ্রিয়তার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:

  • দ্রুত বংশবৃদ্ধি: একটি মা ছাগল প্রতি ১৩-১৪ মাসে দুইবার বাচ্চা দেয় এবং প্রতিবারে ৩-৪টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসবে সক্ষম।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: এই জাতের ছাগলের রোগবালাই কম হওয়ায় চিকিৎসা বা রক্ষণাবেক্ষণে বাড়তি খরচ নেই বললেই চলে।
  • খাবারের সহজলভ্যতা: বাড়ির আশপাশের লতাপাতা বা মাঠে চরিয়েই এদের পালন করা যায়, ফলে খাবারের খরচ খুবই কম।
  • নিশ্চিত লাভ: খুব অল্প পুঁজিতে শুরু করে দ্রুত লাভবান হওয়া সম্ভব, যে কারণে জেলার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ ছাগলই এখন ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের।

ছাগল পালনে বদলে গেছে ভাগ্য: প্রান্তিক মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল এখন শুধু একটি পশু নয়, এটি চুয়াডাঙ্গার হাজারো মানুষের কাছে স্বনির্ভরতার প্রতীক। এর মাধ্যমে ভাগ্য বদলেছে রাবেয়া খাতুন, সিরাজুল ইসলাম ও লাভলী খাতুনের মতো অগণিত মানুষের।

মোমিনপুরের রাবেয়া খাতুন একটি ছাগল দিয়ে শুরু করে আজ ৩০টি ছাগলের মালিক। এই ছাগলের আয় দিয়েই তিনি সংসার চালান। একই গ্রামের ভূমিহীন সিরাজুল ইসলাম দুটি ছাগল থেকে খামার বড় করে এখন ৪০টিরও বেশি ছাগলের মালিক। রেললাইনের পাশের কুঁড়েঘরে থেকেও তিনি ছাগল পালন করে পরিবারকে স্বাবলম্বী করেছেন। অন্যদিকে, পারদূর্গাপুরের লাভলী খাতুন অভাবকে জয় করে দুটি ছাগল থেকে ৫২টি ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন এবং বাড়িতে বসেই বছরে আয় করছেন লক্ষাধিক টাকা।

‘গরিবের গাভী’ ও সরকারি উদ্যোগ

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারি পর্যায়েও নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে ৬৫৯টি খামার রয়েছে, যেখানে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক ছাগল পালন করা হচ্ছে। সরকারি খামারগুলো থেকে খামারিদের সুলভ মূল্যে উন্নত জাতের পাঁঠা সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা এই ছাগলকে ‘গরিবের গাভী’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা মনে করেন, এটি কেবল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না, বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পুষ্টির চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা জেলার সামগ্রিক অর্থনীতিতে এক ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button