Uncategorizedইসলাম ধর্ম

দুনিয়ার মোহ দাজ্জালের আগমনের চিহ্ন—আবু ত্ব-হা আদনানের নতুন ভাষ্য।

বর্তমান যুগের ধন-সম্পদের মোহ, চাকচিক্য এবং পরকালে অবিশ্বাসকে দাজ্জালের আগমনের অন্যতম পূর্বাভাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন জনপ্রিয় ইসলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা আদনান। সূরা কাহাফের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি আধুনিক সভ্যতার বস্তুবাদী চেতনার স্বরূপ তুলে ধরেন।

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক:

আধুনিক বিশ্বব্যবস্থা, ভোগবাদ এবং পরকালের প্রতি মানুষের উদাসীনতাকে দাজ্জালের সমসাময়িক যুগের প্রতিচ্ছবি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ইসলামিক স্কলার আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান। এক আলোচনায় তিনি বলেন, দাজ্জালের আগমনের পূর্বে পৃথিবীতে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যেখানে অধিকাংশ মানুষ দুনিয়ার ধন-সম্পদ ও চাকচিক্যের মোহে পরকালকে অস্বীকার করবে।

তিনি সূরা কাহাফের আলোকে বিশ্লেষণ করে দেখান, কীভাবে আজকের বস্তুবাদী সভ্যতা কুরআনে বর্ণিত ঘটনার সাথে মিলে যায়।

সূরা কাহাফের দুই বন্ধুর শিক্ষণীয় ঘটনা

মাওলানা আবু ত্ব-হা আদনান তার আলোচনায় সূরা কাহাফে বর্ণিত দুই বন্ধুর ঘটনা তুলে ধরেন। ঘটনাটি এমন—এক ব্যক্তি ছিলেন বিশাল ধন-সম্পদের মালিক। তার খেজুর ও আঙুরের বাগান ছিল, যার মধ্য দিয়ে নদী প্রবাহিত হতো। একদিন তিনি তার এক দরিদ্র বন্ধুকে নিয়ে নিজের বাগানে প্রবেশ করেন এবং অহংকার করে বলেন, “আমি তোমার চেয়ে সম্পদে ও শক্তিতে অনেক সেরা।”

এই ধনী বন্ধুকে তিনি বর্তমান যুগের বস্তুবাদী মানুষের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেন।

ধনী বন্ধুর ঔদ্ধত্য ও পরকাল অস্বীকার

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ধনী বন্ধুটি দম্ভের সাথে ঘোষণা করে যে, সে মনে করে না তার এই বিশাল সম্পত্তি কখনো ধ্বংস হবে। সে আরও বলে, “আমি বিশ্বাস করি না যে, কিয়ামত বলে কিছু আছে।”

আবু ত্ব-হা আদনান এই মানসিকতাকে সরাসরি বস্তুবাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন। তার মতে, বাড়ি-গাড়ি, অর্থ-বিত্ত নিয়ে মগ্ন থাকা এবং পরকালীন জীবনে অবিশ্বাস করাই হলো দাজ্জালি সভ্যতার মূল ভিত্তি, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান।

ঈমানি জবাব ও অহংকারের পতন

গল্পের পরবর্তী অংশে, গরিব বন্ধুটি তার ধনী বন্ধুকে আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাসের বিষয়ে সতর্ক করে দেয়। সে বলে, “তুমি কি সেই মহান সত্তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?” সে আরও মনে করিয়ে দেয়, বাগানে প্রবেশের সময় অহংকার না করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত ছিল।

কিন্তু ধনী বন্ধুটি তার কথায় কর্ণপাত না করায় আল্লাহ এক রাতের মধ্যেই তার সমস্ত বাগান ও সম্পদ ধ্বংস করে দেন। পরদিন সকালে নিজের ধ্বংস হয়ে যাওয়া সম্পত্তি দেখে সে আফসোস করে বলে, “হায়! আমি যদি আমার রবের সাথে কাউকে শরিক না করতাম!”

বর্তমান বিশ্বের সাথে ঘটনার সাদৃশ্য

এই ঘটনাকে বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করে আবু ত্ব-হা আদনান বলেন, “আজকের दुनियाর দিকে তাকান। বিউটি কনটেস্ট, বিশ্বকাপ, ফ্যাশন শো—এই সবকিছুই দুনিয়াকেন্দ্রিক। এগুলোর পেছনে কি কোনো পরকালীন উদ্দেশ্য আছে?”

তিনি পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাকাসুরের আয়াত উল্লেখ করে বলেন, “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, যতক্ষণ না তোমরা কবরে উপস্থিত হও।” তিনি মনে করিয়ে দেন, মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা হলেও আজ সবাই সেই লক্ষ্য থেকে বহু দূরে সরে গেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button