এক্সক্লুসিভদেশসাক্ষাৎকার

তরুণ উদ্যোক্তা আদিব রশীদের সাফল্য ও ভাবনা, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতে

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করা আদিব রশীদ বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের এক অনুপ্রেরণামূলক নাম। শিক্ষাজীবন থেকেই তিনি ব্যবসায়িক মূলনীতি, কৌশলগত ব্যবস্থাপনা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন করেছেন, যা তার পেশাগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ব্যাংক, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং সরকারি প্রকল্পের অভিজ্ঞতা নিয়ে গড়ে উঠেছেন তিনি। ব্যাংকিং খাত তাকে শিখিয়েছে সুনির্দিষ্টতা ও নিয়ন্ত্রক সচেতনতা, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি শিখিয়েছে কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও অভিযোজন, আর সরকারি প্রকল্প তাকে শিখিয়েছে নীতি প্রণয়ন ও স্টেকহোল্ডার ব্যবস্থাপনা। তবে সবচেয়ে শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা এসেছে কর্পোরেট জগৎ থেকে, যেখানে নেতৃত্ব, দলগত কাজ ও আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা তাকে সমন্বিত পেশাদার হিসেবে গড়ে তুলেছে।

তিনি বাংলাদেশের প্রথম সারির আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান কোম্পানির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। পাশাপাশি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বনামধন্য বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সগার্ড গ্রুপ এলএলসি–তে এভিয়েশন সেক্টরের একমাত্র বাংলাদেশি প্রতিনিধি (ইপিটি এসেসর) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স আয়ে তার অবদান প্রশংসিত। দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে তিনি দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।

আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থান খাতে তার অবদান বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়। দক্ষ জনশক্তিকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়ে তিনি দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। নৈতিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, মানসম্পন্ন প্রার্থী বাছাই এবং বৈশ্বিক মান বজায় রেখে তিনি শুধু প্রবাসীদের নয়, নিয়োগকারী দেশগুলোকেও উপকৃত করছেন। তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জনাব মোঃ শফিকুর রহমান কিরণের প্রতি, যিনি তাকে এই সেক্টরে পদচারণা করিয়েছেন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তার নিরলস পরিশ্রম ও নিষ্ঠা এই পথ উজ্জ্বল করেছেন।

তার শিক্ষাজীবন এই ক্যারিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিএবিএ এবং এমবিএ শিক্ষালাভ তাকে বিশ্লেষণী দক্ষতা, নেতৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আত্মবিশ্বাসী করেছে। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক নীতি ও নৈতিকতার শিক্ষা তিনি আজও তার পেশাগত ও উদ্যোক্তা জীবনে কাজে লাগাচ্ছেন।

দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কর্মসংস্থান খাতে তার উদ্যোগ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সুনাম বৃদ্ধি করেছে। যদিও তিনি বৈশ্বিক অস্থিরতা ও প্রতিযোগিতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন, তবে ডিজিটাল রেমিট্যান্স, দক্ষতা উন্নয়ন ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তিনি সম্ভাবনার দিগন্তও দেখছেন।

বর্তমানে আদিব রশীদ ক্যাটারিং, ট্রাভেলস, স্টুডেন্ট ও অন্যান্য কনসালটেন্সি ব্যবসা পরিচালনা করছেন মানুষের জীবনকে সহজ করার জন্য। উদ্যোক্তা হিসেবে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেবা এবং মান অক্ষুণ্ণ রেখে একসঙ্গে একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করা।

তার অনুপ্রেরণা আসে মানবসেবা থেকে। তিনি বিশ্বাস করেন, মানবতার সেবা মানেই স্রষ্টার সেবা। ভবিষ্যতে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও টেকসই জীবিকা খাতে সমাজসেবামূলক প্রকল্প হাতে নিতে চান।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বার্তা দিয়েছেন— কৌতূহলী হতে, জ্ঞান অর্জনে অবিচল থাকতে এবং ভবিষ্যতের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নিজেদের বিশ্ব নাগরিক এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। তার মতে সফলতা শুধু অর্জনে নয়, বরং মানুষের ও সমাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব তৈরিতে নিহিত।

আগামী দশ বছরে তিনি নিজেকে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে চান একজন অভিজ্ঞ, পরিবার ও ধর্মমুখী মানুষ হিসেবে; পেশাগতভাবে টেকসই ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে; এবং সামাজিকভাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকা উন্নয়নে প্রভাবশালী অবদান রাখতে সক্ষম একজন উদ্যোক্তা হিসেবে।

তরুণ উদ্যোক্তা আদিব রশীদের সাফল্য শুধু তার নিজের নয়, বরং দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও প্রজন্মের জন্য এক অনুপ্রেরণার গল্প।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button