Uncategorizedবাংলাদেশ

রেলের নতুন ইঞ্জিন কেনায় চালকদের ১১ দফা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইঞ্জিন সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়েকে গতিশীল করতে নতুন করে ৩০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও, নতুন ইঞ্জিনগুলো কতটা কার্যকর ও নিরাপদ হবে তা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে ১১ দফা গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। তাদের দাবি, মাঠপর্যায়ের চালকদের মতামত উপেক্ষা করে ইঞ্জিন কেনা হলে তা দেশের জন্য শতভাগ উপযোগী হবে না।

কেন এই প্রস্তাব?

সম্প্রতি রেলওয়ের মহাপরিচালককে পাঠানো এক চিঠিতে ইউনিয়নটি জানায়, অতীতে চালকদের অভিজ্ঞতা ও দেশের পরিবেশের কথা চিন্তা না করে ইঞ্জিন কেনায় সেগুলো থেকে সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া যায়নি। তাই এবারের ক্রয়ের আগে যারা সরাসরি ইঞ্জিনগুলো পরিচালনা করবেন, সেই লোকোমাস্টারদের (ট্রেন চালক) মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেন, “যারা ইঞ্জিনগুলো ব্যবহার করবেন, তাদের মতামত না নিয়ে এবং সঠিক প্রশিক্ষণ না দিয়ে যতই ভালো ইঞ্জিন আনা হোক, যাত্রীরা ভালো সেবা পাবেন না। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করবে, যাতে লোকোমোটিভগুলো আরও কার্যকর ও নিরাপদ হয়।”

চালকদের প্রস্তাবে কী কী আছে?

লোকোমাস্টারদের অভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনকে সামনে রেখে দেওয়া ১১ দফা প্রস্তাবের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হলো:

  • আধুনিক ও আরামদায়ক ক্যাব: বর্তমান ‘লং হুড’ ইঞ্জিনের সমস্যা সমাধানে ডাবল ক্যাব (দুই দিকেই চালকের আসন) আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পাশাপাশি ক্যাবের ভেতরে উন্নতমানের এসি, কার্যকর ফ্যান, পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা এবং লম্বা চালকদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে দাঁড়ানোর মতো উঁচু ক্যাব তৈরির দাবি জানানো হয়েছে।
  • নিরাপত্তা ও ব্রেকিং সিস্টেম: দুর্ঘটনা এড়াতে ইঞ্জিনের ক্যাব ফ্রেমকে আরও শক্তিশালী করার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ব্রেকিং সিস্টেমকে আরও উন্নত করতে এয়ার ও ভ্যাকুয়াম ব্রেকের সঙ্গে ডাইনামিক ব্রেক যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
  • স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ: দীর্ঘ সময় ইঞ্জিন চালাতে হয় বলে লোকোমাস্টারদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মানসম্মত শৌচাগারের (টয়লেট) ব্যবস্থা রাখার দাবি জানানো হয়েছে, যা বর্তমানে অধিকাংশ ইঞ্জিনে নেই।
  • উন্নত প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতা: ৬টি ট্রাকশন মোটরসহ অধিক হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন আনার কথা বলা হয়েছে, যাতে একটি বা দুটি মোটর বিকল হলেও ট্রেনটি সচল রাখা যায়। এছাড়া চালকের জন্য ঘোরানো আসন (রোটেটিং সিট), স্পষ্ট দেখার জন্য স্বচ্ছ কাচ, এলইডি প্রজেক্টর লাইট, কার্যকর ওয়াইপার এবং সামনে-পেছনে ক্যামেরা সংযুক্ত করার দাবিও রয়েছে।
  • প্রশিক্ষণ ও যন্ত্রাংশ: ইঞ্জিন আমদানির সঙ্গে সঙ্গে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত খুচরা যন্ত্রাংশ নিশ্চিত করা এবং লোকোমাস্টারদের বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয়েছে।

রেলওয়ে রানিং স্টাফদের আশা, সরকার ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের এই প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করলে নতুন ইঞ্জিনগুলো দেশের রেলসেবায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button