স্বেচ্ছাচারিতা, চাঁদাবাজি ও নারী কেলেঙ্কারি: বিতর্কের কেন্দ্রে রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন

ডেস্ক রিপোর্ট:
গণতন্ত্রের নামে একনায়কতন্ত্র, নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনা, আর্থিক অস্বচ্ছতা, ভিন্নমতের কর্মীদের বহিষ্কার এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নারী সদস্যদের অনৈতিক প্রস্তাব দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগে জর্জরিত রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন। সভাপতি মীর আনোয়ার আলী (মিঠু) ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জয়ের নেতৃত্বে থাকা এই কমিটি পুরো রংপুর জুড়ে সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
গণতন্ত্রহীন নির্বাচন ও একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ
সদস্যদের অভিযোগ, একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরির মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়ন এখন কতিপয় নেতার ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। নামমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বর্তমান কমিটি ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং এরপর থেকেই সংগঠনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে।
ভুক্তভোগী একাধিক সদস্য জানান, সংগঠনের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ছিটেফোঁটাও নেই। সদস্য তালিকা, আয়-ব্যয়ের হিসাব কিংবা সভার কার্যবিবরণী—কোনো কিছুই সাধারণ সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত নয়। এর চেয়েও ভয়াবহ অভিযোগ হলো, কমিটির নেতাদের মতের বিরুদ্ধে গেলেই নেমে আসে শাস্তির খড়্গ। কোনো ধরনের কারণ দর্শানোর নোটিশ বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই সরাসরি সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে দেওয়া হয়।
নিবন্ধন ও গঠনতন্ত্রহীন সংগঠন: উদ্দেশ্য কী?
আশ্চর্যজনকভাবে, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও ইউনিয়নটির কোনো প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন নেই, এমনকি তৈরি করা হয়নি কোনো গঠনতন্ত্রও। সাধারণ সম্পাদক এস এম জয়কে নিবন্ধনের কথা বলা হলে তিনি এর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করে বলেন, “এভাবেই তো চলছে, নিবন্ধনের কী দরকার?”
সদস্যদের অভিযোগ, এই নিবন্ধনহীন অবস্থাকেই পুঁজি করে চলছে মূল ধান্দা। ইউনিয়নের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে একটি চক্র বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করছে। নিবন্ধন ও গঠনতন্ত্র না থাকায় তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হচ্ছে না।
নারী সদস্যকে অনৈতিক প্রস্তাবের গুরুতর অভিযোগ
ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এস এম জয়ের বিরুদ্ধে উঠেছে নারী কেলেঙ্কারির মতো মারাত্মক অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নারী সদস্য অভিযোগ করেন, সাধারণ সম্পাদক তাদের বিভিন্ন সময়ে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় পরের দিনই মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে ইউনিয়ন থেকে বহিষ্কারের বার্তা পাঠানো হয়। এ বিষয়ে ইউনিয়নের অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সাধারণ সদস্যদের ক্ষোভ ও প্রশাসনের নীরবতা
অতিষ্ঠ হয়ে সাধারণ সদস্যরা সম্প্রতি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে সংগঠনের নিবন্ধন এবং সাধারণ সভা ডেকে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সেই দাবিকেও পাত্তা দিচ্ছে না বর্তমান নেতৃত্ব। উল্টো সদস্যরা একত্রিত হয়ে আলোচনা করতে চাইলেই তাদের বিরুদ্ধে “অফিস দখলের চেষ্টা”র মতো মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় হয়রানি করা হয়।
রংপুরের সাংবাদিক মহল মনে করছে, এ ধরনের কার্যক্রম মূলধারার সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী এবং এটি সৎ ও পেশাদার সাংবাদিকদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে। তারা দ্রুত এই বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।



