Uncategorizedঅপরাধএক্সক্লুসিভঢাকাবাংলাদেশরাজনীতিরাজনীতি

পলাতক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগীদের দাপট, উত্তপ্ত আশকোনা সিটি কমপ্লেক্স

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি: ঢাকার বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজা বিগত ১৬ বছরের শাসনামলে ঢাকা-১৮ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিব হাসান ও খসরু চৌধুরীর ছত্রছায়ায় উত্তরা, বিমানবন্দর ও দক্ষিণখান থানা এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই সময়ে তিনি জমি ক্রয়-বিক্রয়, ভবন নির্মাণ, ডেভেলপার ব্যবসা, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতার মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন।

গত বছরের ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর সোহেল রেজা আত্মগোপনে চলে যান। বর্তমানে তার পরিবার দক্ষিণখান থানার কলেজ রোডের মদিনা টাওয়ারে বসবাস করছে এবং তিনি মাঝে মাঝে রাতে গোপনে পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। ৫ আগস্টের পর তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • উত্তরা পূর্ব থানার মামলা নং-১৫ (ধারা: ১৪৮/১৮৯/১২০/৩০২/৩৪), আসামি নং-২৮৭।
  • উত্তরা পশ্চিম থানার মামলা নং-৮ (ধারা: ১৪০/১৬৮/৩২৩/৩০২/১০৯/৩৪), আসামি নং-১২৮।
  • বিমানবন্দর থানার মামলা নং-জিআর ১৮০/২৪, আসামি নং-৭১।

অভিযোগ উঠেছে, সোহেল রেজার অনুপস্থিতিতে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত সিটি কমপ্লেক্সের রেজাউল ইসলাম ও মোঃ সজল পুরো এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের নিবাসী ও দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকা মোঃ সজল সিটি কমপ্লেক্সে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন এবং সোহেল রেজার সঙ্গে সখ্যতার মাধ্যমে তার বিশ্বস্ত সহযোগীতে পরিণত হন। অন্যদিকে, বরিশাল নিবাসী রেজাউল ইসলাম সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদুল আলম ও আওয়ামী-সমর্থিত ফেডারেশনের সভাপতি জসীমউদ্দীনের প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর ব্যবসায়িক অংশীদারত্বের প্রতিষ্ঠান এহসান গ্রুপে যোগ দেন। ৫ আগস্টের পর এই গ্রুপটির প্রধান কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়।

সোহেল রেজার রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে রেজাউল সিটি কমপ্লেক্স সোসাইটির সভাপতি পদ দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রেজাউল (সভাপতি) ও সজল (সাধারণ সম্পাদক) সোসাইটির বিধি লঙ্ঘন করে জোরপূর্বক পদ দখল করে নেন। নির্বাচনকালীন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জুয়েল ও মাসুদ নামে দুজন বাসিন্দা সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন।

অভিযোগ আরও জানা যায়, রেজাউল ও সজল নিজেদের বিএনপি সমর্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে এবং কমপ্লেক্সের কয়েকজন অরাজনৈতিক ফ্ল্যাট মালিককে আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করতে উত্তরা এলাকার বিএনপির সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সিনিয়র নেতাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

সিটি কমপ্লেক্সের ফ্ল্যাট মালিক শাহ আলম বাদলের বরাত দিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দিকে সোহেল রেজা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগাগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন। এছাড়া আরেক ফ্ল্যাট মালিক সাইফুল আলমের একটি দোকান জবরদখল করে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দায়ের করা হলে মন্ত্রণালয় বিষয়টি সমাধানের জন্য উত্তরা বিভাগের ডিসিকে নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেনের মধ্যস্থতায় সোহেল রেজার সঙ্গে সিটি কমপ্লেক্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েক দফা বৈঠক হলেও সাইফুল আলমের দোকানটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে, ৫ আগস্টের পর সোহেল রেজার প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় বাসিন্দা হান্নান জেল থেকে মুক্তি পান। হান্নানের স্ত্রী বাদী হয়ে সোহেল রেজাসহ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই মামলায় সিটি কমপ্লেক্সের কয়েকজন বাসিন্দাকেও আসামি করা হয়। আসামিদের অভিভাবকরা এস এম রফিকুল ইসলামের শরণাপন্ন হলে তিনি হান্নানের সঙ্গে কথা বলে চার্জশিট থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেন। এই ঘটনাগুলোকে রেজাউল ও সজল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী দাবি করেন। এ বিষয়ে এস এম রফিকুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আশকোনা সিটি কমপ্লেক্স স্বার্থরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ তোফাজ্জল হোসেনের মতে, রেজাউল ও সজল সোসাইটির বিধি লঙ্ঘন করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছেন এবং তারা মূলত সোহেল রেজার এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর। কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক শাহাবুদ্দিন নয়নও একই অভিযোগ করে বলেন, তারা কমপ্লেক্সের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে এটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন এবং বাসিন্দারা ঐক্যবদ্ধভাবে এর প্রতিবাদ করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button