সালাতে হাত তোলা: রাসূল (ﷺ)-এর পদ্ধতি কেমন ছিল? হাদিসের আলোকে বিস্তারিত

ইসলামিক ডেস্ক রিপোর্ট:
ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হলো সালাত বা নামায। প্রতিটি মুসলিমের জন্য সালাত আদায় করা فرض। তবে সালাতের কিছু সূক্ষ্ম নিয়ম-কানুন, যেমন—সালাতের মধ্যে কখন এবং কীভাবে হাত তুলতে হবে (যা ‘রাফউল ইয়াদাইন’ নামে পরিচিত), তা নিয়ে মুসলিমদের মধ্যে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে। বিষয়টি নিয়ে অনেক সময় সাধারণ মুসল্লিরা দ্বিধায় পড়েন। এই দ্বিধা দূর করার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস হলো হাদিস। চলুন, সহীহ হাদিসের আলোকে জেনে নেওয়া যাক, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সালাতে কখন হাত উঠাতেন।
হাদিসের বর্ণনা: রাসূল (ﷺ) কখন হাত উঠাতেন?
এই বিষয়ে অন্যতম সুস্পষ্ট এবং নির্ভরযোগ্য একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রা.)। হাদিসটি সহীহ বুখারীসহ একাধিক হাদিসগ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
হাদিস নং ৮৭৯ অনুযায়ী, হযরত ইব্ন উমর (রা.) বলেন, তিনি রাসূল (ﷺ)-কে সালাত আদায়ের সময় তিনটি স্থানে হাত তুলতে দেখেছেন:
- সালাত শুরুর তাকবীরের সময়: যখন তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করতেন, তখন কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাতেন।
- রুকুতে যাওয়ার সময়: রুকু করার জন্য যখন তাকবীর বলতেন, তখনও কাঁধ পর্যন্ত হাত উঠাতেন।
- রুকু থেকে ওঠার সময়: যখন ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে রুকু থেকে মাথা উঠাতেন, তখনও হাত উঠাতেন এবং এরপর ‘রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন।
যেসব স্থানে হাত উঠাতেন না
একই হাদিসে হযরত ইব্ন উমর (রা.) বিষয়টি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, রাসূল (ﷺ) সব স্থানে হাত উঠাতেন না। তিনি উল্লেখ করেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সিজদায় যাওয়ার সময় এবং সিজদা থেকে ওঠার সময় হাত উঠাতেন না। এই বর্ণনাটি সালাতে হাত তোলার স্থানগুলোকে সুনির্দিষ্ট করতে সাহায্য করে।
মাযহাবগত দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুশীলন
রাসূল (ﷺ)-এর সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে ইসলামের প্রসিদ্ধ ফিকহী মাযহাব বা আইনশাস্ত্রের ইমামগণ সালাতে হাত তোলার বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
- হানাফী মাযহাব: হানাফী মাযহাবের অনুসারীগণ শুধুমাত্র সালাত শুরুর তাকবীরে তাহরীমার সময় হাত তোলেন। তাদের মতে, অন্যান্য স্থানে হাত তোলার বিধানটি পরবর্তীতে রহিত হয়ে গিয়েছিল, যার সপক্ষে অন্যান্য হাদিস ও সাহাবীদের আমলকে তারা দলিল হিসেবে পেশ করেন। তবে ঈদের সালাতের অতিরিক্ত তাকবীর এবং বিতর সালাতের দোয়া কুনুতের সময় হাত তোলার নিয়ম রয়েছে।
- অন্যান্য মাযহাব: শাফিঈ, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উপরে উল্লিখিত হযরত ইব্ন উমর (রা.)-এর হাদিসসহ অন্যান্য সহীহ হাদিসের উপর ভিত্তি করে সালাতের শুরুতে, রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় হাত তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং এটিই অনুশীলন করেন।
শেষ কথা:
সালাতে হাত তোলার বিষয়টি ফিকহী ইজতিহাদ বা গবেষণার একটি অংশ। প্রতিটি মাযহাবের সিদ্ধান্তই কুরআন ও সুন্নাহর গভীর পর্যালোচনার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই সাধারণ মুসল্লিদের জন্য উত্তম হলো, তারা যে মাযহাব অনুসরণ করেন অথবা যে আলেমদের ওপর আস্থা রাখেন, তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আমল করা এবং অন্য পদ্ধতির অনুসারীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।



