ইসলাম ধর্ম

নামাজ-রোজা সত্ত্বেও ভয়ঙ্কর শাস্তি: যে পাপে শেষ যুগের মুসলিমরা বানর ও শূকর হয়ে যাবে!

রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর একটি হাদিসে বাদ্যযন্ত্র, গান-বাজনা এবং অনৈতিক বিনোদনে লিপ্ত থাকার ভয়াবহ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য এক गंभीर সতর্কবার্তা।

ইসলামিক ডেস্ক

ইসলামের মৌলিক ইবাদত—নামাজ, রোজা, হজ এবং শাহাদাহর সাক্ষ্য দেওয়া সত্ত্বেও মুসলিম উম্মাহর একটি অংশকে শেষ যুগে বানর ও শূকরের মতো নিকৃষ্ট প্রাণীতে রূপান্তরিত করা হবে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর একটি হাদিসে এই ভয়াবহ শাস্তির কারণ ও প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে, যা আধুনিক মুসলিম সমাজের জন্য এক কঠোর সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

হাদিসবিশারদ ইমাম আল-বুখারির অন্যতম গ্রন্থ “আত-তারিখুল কাবির”-এ এই হাদিসটি সংকলিত হয়েছে, যা মুসলিমদেরকে নির্দিষ্ট কিছু পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য জোরালোভাবে তাগিদ দেয়।

হাদিসের মূল বর্ণনা

হাদিসটিতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং তাঁর সাহাবিদের মধ্যে একটি কথোপকথন বর্ণিত হয়েছে, যা নিম্নরূপ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:“এই উম্মতের একদল মানুষকে শেষ যুগে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করা হবে।”

সাহাবায়ে কেরাম (রা.) আরজ করলেন:“হে আল্লাহর রাসূল! তারা কি এই সাক্ষ্য দেবে না যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল’?”

তিনি ﷺ বললেন:“অবশ্যই, তারা এই সাক্ষ্য দেবে, রোজা রাখবে, নামাজ পড়বে এবং হজও করবে।”

সাহাবারা পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন:“তাহলে তাদের এই পরিণতির কারণ কী হবে?”

তিনি ﷺ বললেন:“তারা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল এবং গায়িকা নারীদের গ্রহণ করবে। তারা গান-বাজনা ও পানাহারে মত্ত থেকে রাত যাপন করবে। অতঃপর সকালেই তাদের বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করা হবে।”

(উৎস: ইমাম আল-বুখারি, আত-তারিখুল কাবির, হাদিস: ৫৫৯০)

শাস্তির কারণ: আমল থাকা সত্ত্বেও কেন এই পরিণতি?

এই হাদিসটি মুসলিমদের জন্য একটি গভীর চিন্তার উদ্রেক করে। এখানে দেখা যাচ্ছে, শাস্তির সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তিরা কাফির বা অবিশ্বাসী নন। তারা ইসলামের মৌলিক স্তম্ভগুলো—যেমন শাহাদাহ, নামাজ, রোজা ও হজ—পালন করবেন। কিন্তু এরপরও তাদের এই ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এর মূল কারণ হলো তিনটি মারাত্মক পাপে লিপ্ত হওয়া:
১. বাদ্যযন্ত্র ও ঢোলের ব্যবহার: ইসলামে অননুমোদিত বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহারকে निषिद्ध মনে করা হয়।
২. গায়িকা নারীদের গ্রহণ: বিনোদনের জন্য গায়িকা নারীদের গান শোনা এবং তাদের নিয়ে মত্ত থাকাকে গুরুতর পাপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
৩. রাতে পানাহার ও উদ্দাম বিনোদন: আল্লাহর ইবাদতে রাত অতিবাহিত না করে গান-বাজনা, মদ্যপান এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে রাত কাটানো।

ইসলামী চিন্তাবিদগণ মনে করেন, এই হাদিসটি মূলত সেইসব মুসলিমদের সতর্ক করছে, যারা ইসলামের মৌলিক ইবাদতগুলোকে নিছক প্রথা হিসেবে পালন করে, কিন্তু জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ-নিষেধকে উপেক্ষা করে চলে।

হাদিসের শিক্ষা ও প্রাসঙ্গিকতা

এই হাদিসটি বর্তমান সময়ের জন্যও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। আধুনিক যুগে গান-বাজনা, কনসার্ট এবং বিভিন্ন ধরনের বিনোদনের সহজলভ্যতা মুসলিম সমাজকে নানাভাবে প্রভাবিত করছে। হাদিসটি মুসলিমদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কিছু পাপ কাজ এতটাই গুরুতর যে, তা ব্যক্তির নামাজ-রোজার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতকেও মূল্যহীন করে দিতে পারে এবং আল্লাহর কঠিন শাস্তির কারণ হতে পারে।

এর মূল শিক্ষা হলো, ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। এখানে কিছু ইবাদত পালন করে অন্য পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল-হারামের বিধি-নিষেধ মেনে চলাই একজন মুমিনের দায়িত্ব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button