ইসলাম ধর্ম

যে শহীদের গোসল হয়েছিল আসমানে: উহুদ প্রান্তরের নববিবাহিত সাহাবি হানজালা (রা.)-এর অবিশ্বাস্য ঘটনা

ইসলামিক ডেস্ক

ইসলামের ইতিহাসে উহুদ যুদ্ধ একাধারে বিজয় ও গভীর বেদনার এক অধ্যায়। এই যুদ্ধে মুসলিমরা হারিয়েছিলেন হযরত হামজা (রা.)-সহ সত্তরজন বীর সাহাবিকে। এই শহীদদের মধ্যেই এমন একজন ছিলেন, যার শাহাদাত ও সম্মাননা কেয়ামত পর্যন্ত মুমিনদের হৃদয়ে প্রেরণা জোগাবে। তিনি হলেন নববিবাহিত সাহাবি হযরত হানজালা (রা.), যাকে স্বয়ং ফেরেশতারা আসমানে গোসল দিয়েছিলেন।

উহুদের প্রান্তরে শহীদের খোঁজে

যুদ্ধের শেষে যখন শহীদদের মরদেহ একত্রিত করা হচ্ছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গুনে দেখেন যে সত্তরজনের মধ্যে আটষট্টিজনের লাশ পাওয়া গেছে। দুজন নিখোঁজ—তাঁর চাচা সায়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা (রা.) এবং মাত্রই বিয়ে করা যুবক হানজালা (রা.)। প্রিয় সাহাবিদের খুঁজে না পাওয়ায় রাসূল (ﷺ)-এর মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। তিনি সবাইকে তাঁদের খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন।

এক নববধূর আবেদন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন শহীদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন একজন বোরকা পরিহিতা নারী তাঁর সামনে এসে দাঁড়ান। নারীটি ছিলেন হযরত হানজালা (রা.)-এর নববধূ। তিনি রাসূল (ﷺ)-কে স্মরণ করিয়ে দেন যে, গত সন্ধ্যায়ই তিনি তাঁদের বিয়ে পড়িয়েছেন।

ভেজা চোখে তিনি বলেন:

“হে আল্লাহর রাসূল! আমার হাতের মেহেদি এখনো শুকায়নি। গতকাল বিকেলে বিয়ে হয়েছিল, আর আজ ভোরেই তিনি জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে উহুদের দিকে ছুটে গেছেন। তাঁর সাথে আমার ভালোভাবে পরিচয় হওয়ারও সুযোগ হয়নি। যাওয়ার আগে তিনি বলে গেছেন, ‘যদি বেঁচে থাকি, তবে দেখা হবে দুনিয়ায়। আর শহীদ হলে দেখা হবে জান্নাতে’।”

এই নববধূ এক অসামান্য লজ্জার সাথে এক গোপন কথা প্রকাশ করেন, যা শুনে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়। তিনি বলেন, “যাওয়ার আগে তিনি আমার কপালে চুম্বন করেছিলেন। লজ্জায় বলতে পারিনি যে, আপনার ওপর গোসল ফরজ হয়েছে।”

এরপর তিনি এক বিশেষ আবেদন জানান: “হে আল্লাহর রাসূল! শহীদদের তো গোসল দেওয়া হয় না। কিন্তু আমার স্বামীকে যদি আপনি একটু গোসলের ব্যবস্থা করতেন?”

আসমানি গোসল ও ফেরেশতাদের সম্মাননা

রাসূল (ﷺ) তাঁর এই আবেদনে সাড়া দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খবর আসে যে, হানজালা (রা.)-এর মরদেহ পাওয়া গেছে। সাহাবিরা সেখানে ছুটে গিয়ে এক অলৌকিক দৃশ্য দেখতে পান। হযরত হানজালা (রা.)-এর মরদেহ সাদা কাফনে মোড়ানো এবং তাঁর চুল ও মাথা থেকে পানি টপকে পড়ছে, যেন এইমাত্র কেউ তাকে গোসল করিয়েছে।

রাসূল (ﷺ) যখন তাঁর মাথায় হাত রাখলেন, তখন হযরত জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর বার্তা নিয়ে হাজির হলেন। তিনি জানালেন:

“হে আল্লাহর রাসূল! হানজালার এই আত্মত্যাগে আল্লাহ এতটাই খুশি হয়েছেন যে, তিনি ফেরেশতাদের আদেশ দিয়েছেন তাঁকে গোসল করাতে। আমরা ফেরেশতারা তাঁকে তৃতীয় আসমানে নিয়ে জান্নাতের জমজম কূপের পানি দিয়ে গোসল করিয়েছি এবং তাঁর শরীরে আল্লাহর বিশেষ সুগন্ধি মিশক ও আম্বর লাগিয়ে দিয়েছি।”

এই ঘটনার পর থেকে হযরত হানজালা (রা.) “গাসিলুল মালাইকা” অর্থাৎ “যাকে ফেরেশতারা গোসল দিয়েছেন” উপাধিতে ভূষিত হন, যা ইসলামের ইতিহাসে এক বিরল সম্মাননা।

ঘটনার শিক্ষা

হযরত হানজালা (রা.)-এর এই ঘটনা প্রমাণ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু, এমনকি নববধূর ভালোবাসাকেও ত্যাগ করার পুরস্কার কতটাยิ่งใหญ่। তাঁর শাহাদাত শেখায় যে, আল্লাহর পথে искренний আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যায় না, বরং দুনিয়া ও আখিরাতে সর্বোচ্চ সম্মানের কারণ হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button