কুমিল্লাজাতীয়দুর্ঘটনাবাংলাদেশ

কুমিল্লায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা: বাড়ি ফেরার পথে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু

কাভার্ডভ্যানের নিচে চাপা পড়া প্রাইভেটকারে ছিলেন বাবা-মা ও দুই ছেলে; গ্রামের বাড়িতে শোকের মাতম।

এম এ মান্নান:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন সদস্য নিহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলায় একটি ইউটার্নে কাভার্ডভ্যান উল্টে একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়লে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। ঢাকা থেকে চিকিৎসা শেষে গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে এই হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহতদের দাফনের জন্য খোঁড়া হচ্ছে পাশাপাশি চারটি কবর।

একটি পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন—আলহাজ্ব ওমর আলী (৮০), তাঁর স্ত্রী নূরজাহান বেগম (৬৫), তাদের বড় ছেলে ব্যাংক এশিয়া মিরপুর রূপনগর শাখার ব্যবস্থাপক আবুল হাসেম স্বপন (৫০) এবং ছোট ছেলে বেসরকারি চাকরিজীবী আবুল কাশেম মামুন (৪৫)।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে ওমর আলী চিকিৎসার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বড় ছেলের বাসায় গিয়েছিলেন। চিকিৎসা শেষে দুই ছেলে মিলে বাবা-মাকে নিয়ে চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। কিন্তু তাদের সেই ফেরা আর হলো না।

পিছনে রেখে গেলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ

নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা আবুল হাসেম স্বপন রাজধানীর কল্যাণপুরে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকতেন। তার মেয়ে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে এবং ছেলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। অন্যদিকে, ছোট ছেলে আবুল কাশেম মামুন পরিবারসহ রাজধানীর মানিকনগর এলাকায় থাকতেন। তিনি দুটি ছেলেসন্তানের জনক ছিলেন, যারা যথাক্রমে ষষ্ঠ ও প্রথম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

নিহত ওমর আলীর দুই মেয়েও ব্যাংকার। বড় মেয়ে হাসিনা আক্তার যমুনা ব্যাংকে এবং ছোট মেয়ে রোকসানা আক্তার বিথি ডাচ-বাংলা ব্যাংকে কর্মরত। আকস্মিক এই দুর্ঘটনায় পুরো পরিবারটি এখন দিশেহারা।

গ্রামে শোকের মাতম

শুক্রবার রাতেই নিহতদের জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে দাফনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। চারজনের মৃত্যুতে পুরো হোসেনপুর গ্রাম স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। এই দুর্ঘটনা নিরাপদ সড়কের দাবিকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button