চিনে নিন ইবলিশের ৯ সন্তানকে: বাজার থেকে শুরু করে ইবাদত পর্যন্ত সর্বত্রই এদের বিচরণ
ইসলামী শাস্ত্র মতে, মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপে কুমন্ত্রণা দেওয়ার জন্য রয়েছে শয়তানের নির্দিষ্ট সহযোগীরা, যারা সর্বদা আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে সচেষ্ট।
ধর্ম ডেস্ক:
পবিত্র কোরআনে শয়তানকে মানুষের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই শয়তান তথা ইবলিশ একাই কাজ করে না, বরং মানবজাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য তার রয়েছে এক বিশাল বাহিনী। ইসলামী শাস্ত্রের বিভিন্ন বর্ণনায় ইবলিশের এমন ৯ জন বিশেষ সহযোগীর কথা উঠে এসেছে, যাদেরকে তার “সন্তান” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এদের প্রত্যেকের রয়েছে নির্দিষ্ট কর্মক্ষেত্র এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব।
আসুন, তাদের পরিচয় ও কাজ সম্পর্কে জেনে নিই, যাতে আমরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের কুমন্ত্রণা থেকে সতর্ক থাকতে পারি।
ইবলিশের ৯ সন্তানের পরিচয় ও তাদের কর্মক্ষেত্র
১. যালিতুন: বাজারের ফিতনা সৃষ্টিকারী
এর প্রধান কাজ বাজারকে কেন্দ্র করে। কেনাবেচায় প্রতারণা, ওজনে কম দেওয়া, মিথ্যা কসম করা এবং হারাম উপার্জনে উৎসাহিত করার মাধ্যমে সে বাজারে নিজের আধিপত্য কায়েম করে।
২. ওয়াসিন: আকস্মিক বিপদের কারণ
মানুষের জীবনে হঠাৎ আসা বিপদ, দুর্ঘটনা, শোক এবং আকস্মিক বিপর্যয়ের পেছনে ওয়াসিনের কুমন্ত্রণা কাজ করে বলে ধারণা করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষকে হতাশ করে আল্লাহর প্রতি আস্থাহীন করে তোলা।
৩. লাকুস: শিরকের সঙ্গী
যারা এক আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কিছুর উপাসনা করে, যেমন—অগ্নি উপাসক, তাদের دائمی সঙ্গী হলো লাকুস। সে তাদের শিরকের পথে আরও গভীর থেকে গভীরে নিয়ে যায়।
৪. আ’ওয়ান: শাসকদের কুমন্ত্রণাদাতা
শাসক, নেতা ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের পেছনে লেগে থাকাই এর কাজ। সে তাদের মনে অহংকার, অবিচার এবং স্বৈরাচারের বীজ বপন করে, যার ফলে পৃথিবীতে অশান্তি ও জুলুম ছড়িয়ে পড়ে।
৫. হাফফাফ: মাদক ও মত্ততার সহচর
মাদকাসক্তি ছড়ানো এর প্রধান দায়িত্ব। সে মানুষকে মদ্যপানসহ সকল প্রকার নেশাজাতীয় দ্রব্যের দিকে আকর্ষণ করে এবং মাতাল অবস্থায় তাদের সঙ্গী হয়ে আরও পাপ কাজে লিপ্ত করে।
৬. মুররাহ: বিনোদনের নামে গাফিলতি
গান-বাজনা, অনর্থক আড্ডা এবং এমন সব বিনোদন, যা মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়—সেসব আসরে মুররাহের বিচরণ। এর লক্ষ্য হলো, মূল্যবান সময় নষ্ট করিয়ে মানুষকে আখিরাত ভুলিয়ে দেওয়া।
৭. মুসাব্বিত: গুজব ও মিথ্যা সংবাদের বাহক
সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অন্যতম হাতিয়ার হলো গুজব। মুসাব্বিতের কাজই হলো ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথাকে আকর্ষণীয় করে মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে দেওয়া, যার ফলে সমাজে অবিশ্বাস, ঘৃণা ও вражда তৈরি হয়।
৮. দাসিম: পরিবার ধ্বংসকারী
এর লক্ষ্য প্রতিটি পরিবার। ঘরে প্রবেশ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সন্দেহ তৈরি করা, ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া লাগানো এবং পরিবারের শান্তি নষ্ট করে দেওয়াই দাসিমের প্রধান কাজ।
৯. ওয়ালহান: ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টিকারী
সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও ভয়াবহ কাজ করে ওয়ালহান। সে মুসলমানদের প্রধান ইবাদত, যেমন—অজু ও নামাজের সময় মনে সন্দেহ তৈরি করে। মনোযোগ নষ্ট করা, রাকাত সংখ্যা ভুলিয়ে দেওয়া এবং ইবাদতের একাগ্রতা নষ্ট করাই এর মূল উদ্দেশ্য।
এই অদৃশ্য শত্রুদের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে আল্লাহ তা’আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা এবং জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন থাকা প্রত্যেক মুমিনের কর্তব্য।
(সূত্র: আল-মুনাব্বিহাত, ইবন হাজার আল-আসকালানী, পৃষ্ঠা: ৯১)



