ঝিনাইদহে ২০ টাকার দ্বন্দ্বে যুবককে হত্যা: আসামির বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, এলাকায় উত্তেজনা

চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর পর অভিযুক্তের বাড়িতে হামলা চালায় নিহতের স্বজনেরা; অভিযুক্তের পরিবার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী, রয়েছে রাজনৈতিক আশ্রয়ও—দাবি এলাকাবাসীর।
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহে মাত্র ২০ টাকা ধারের দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতে আহত যুবক মোঃ মঞ্জুর বিশ্বাস (৩৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার পর নিহতের বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা অভিযুক্তের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল মাত্র ২০ টাকা ধারকে কেন্দ্র করে। অভিযুক্ত শাহ আলমের ছোট ভাই আবির নিহত মঞ্জুরের ছেলে রিফাতের কাছে ২০ টাকা পেত। টাকা না দেওয়ায় গত ১১ আগস্ট রিফাতের বাইসাইকেল কেড়ে নেয় আবির।
এই বিষয়টি মীমাংসার জন্য গত ১৩ আগস্ট মঞ্জুর ও তার সহযোগীরা ঝিনাইদহ আদালত চত্বরের একটি চায়ের দোকানে শাহ আলমকে ডেকে আনেন। সেখানে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে মঞ্জুরের লোকজন শাহ আলমকে মারধর করে বলে অভিযোগ ওঠে। তখন শাহ আলম সেখান থেকে ছুটে গিয়ে কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে পকেট থেকে ছুরি বের করে মঞ্জুরের পিঠে আঘাত করে পালিয়ে যান। গুরুতর আহত অবস্থায় মঞ্জুরকে প্রথমে ঝিনাইদহ এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে আট দিন পর তার মৃত্যু হয়।
মৃত্যুর পর উত্তেজনা ও হামলা
বৃহস্পতিবার দুপুরে মঞ্জুরের মৃত্যুর খবর তার গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ পৌরসভার লক্ষ্মীকোল গ্রামে পৌঁছালে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী অভিযুক্ত শাহ আলমের আদালতপাড়ার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট এবং বিচুলির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে শাহ আলমের স্ত্রী রিপা খাতুন বলেন, “আমার স্বামীকে মারধর করা হলে সে আত্মরক্ষার জন্য ছুরিকাঘাত করে। আমরা তাকে আত্মসমর্পণ করিয়েছি। কিন্তু মঞ্জুরের মৃত্যুর পর তার লোকজন আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে।”
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
এদিকে, শাহ আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি, এই পরিবারটি এলাকায় দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত এবং একটি অপরাধী সিন্ডিকেট পরিচালনা করে। তাদের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং গরু চুরির মতো অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর শাহ আলম নিজেকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় রেখে প্রায় ৫০ জনের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে এবং একটি কম্পিউটারের দোকান লুট করে। তার ভাই ইমরান বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলেও জানা যায়। তাদের ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কে থাকেন।
পুলিশের বক্তব্য
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “নিহত মঞ্জুরের মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। প্রধান আসামি শাহ আলম আগেই আত্মসমর্পণ করে কারাগারে আছে। তার বাড়িতে হামলার পর থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।” মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, মামলার অপর দুই আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছে।



