ইসলাম ধর্ম

ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সাক্ষ্য দেন! যে দুই সময়ে অবহেলা করা মানেই বিশাল ক্ষতি

সহিহ হাদিসের আলোকে ফজর ও আসরের সালাতের বিশেষ গুরুত্ব। জেনে নিন কীভাবে ফেরেশতারা আপনার আমলের রিপোর্ট সরাসরি আল্লাহর কাছে পেশ করেন।

ইসলামিক ডেস্ক:

আপনি কি জানেন, প্রতিদিন দুবার আপনার সম্পর্কে সরাসরি আল্লাহর কাছে একটি বিশেষ রিপোর্ট পেশ করা হয়? আর এই রিপোর্ট পেশ করেন আল্লাহর সম্মানিত সৃষ্টি—ফেরেশতারা। মানুষের প্রতিটি কাজ লিপিবদ্ধ করার জন্য সর্বদা একদল ফেরেশতা আমাদের সঙ্গে থাকেন। তবে দিনের দুটি নির্দিষ্ট সময়ে তাদের দায়িত্ব পালাবদল হয়, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই নির্ধারিত হয় আল্লাহর কাছে আপনার সম্পর্কে কেমন সাক্ষ্য দেওয়া হবে।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যা শিখিয়েছেন

সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই বিশেষ মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি সাহাবীদের উদ্দেশে বলেন:

“প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় ফেরেশতাদের দুটি দল মানুষের কাছে পালাবদল করে আগমন করেন। ফজর এবং আসরের সালাতের সময় তারা একত্রিত হন। এরপর যারা রাতে দায়িত্বে ছিলেন, তারা আল্লাহর কাছে আরোহণ করেন। আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করেন: ‘তোমরা আমার বান্দাদের কেমন অবস্থায় রেখে এসেছ?’ তারা উত্তরে বলেন: ‘হে আল্লাহ! আমরা যখন তাদের কাছে গিয়েছি, তখন তাদের সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি এবং যখন তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছি, তখনও তাদের সালাতরত অবস্থায়ই পেয়েছি।’”

এই হাদিসের শিক্ষা ও তাৎপর্য

এই হাদিসটি ফজর এবং আসরের সালাতের অপরিসীম গুরুত্ব তুলে ধরে। আসুন, বিষয়টি কয়েকটি ভাগে বুঝে নিই:

  • ফেরেশতাদের পালাবদল: মানুষের আমল পর্যবেক্ষণের জন্য দিনে ও রাতে আলাদা দুটি ফেরেশতার দল নিযুক্ত থাকে। তাদের দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় হলো ফজর ও আসরের নামাজের ওয়াক্ত।
  • ফজর ও আসরের মিলনস্থল: এই দুটি সময় এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, উভয় দলের ফেরেশতারা এ সময় একত্রিত হন। রাতের ফেরেশতারা বিদায় নেন এবং দিনের ফেরেশতারা দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
  • আল্লাহর কাছে প্রতিবেদন: যদিও আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে অবগত, তবুও তিনি ফেরেশতাদের জিজ্ঞাসা করেন। এটি মূলত বান্দার আমলের গুরুত্ব ও ফেরেশতাদের সাক্ষ্যের মর্যাদা বোঝানোর জন্য।
  • সেরা সাক্ষ্য: একজন মুমিনের জন্য এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে যে, ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে গিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছেন—”হে আল্লাহ, আপনার বান্দাকে সালাতরত অবস্থায় পেয়েছি।” ফেরেশতাদের এই ইতিবাচক সাক্ষ্য নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের একটি বড় মাধ্যম।

কেন এই দুটি সময় এত গুরুত্বপূর্ণ?

ফজর ও আসরের সালাত আদায় করা অন্য সালাতের চেয়ে তুলনামূলক কঠিন। ফজরের সময় গভীর ঘুমের আকর্ষণ ত্যাগ করতে হয়, আর আসরের সময় মানুষ সাধারণত জাগতিক কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য বা দিনের শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় ডুবে থাকে। তাই যে ব্যক্তি এই দুই কঠিন সময়ে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকতে পারে, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি।

আসুন, আমরা ফজর ও আসরের সালাতের বিষয়ে আরও যত্নবান হই, যেন প্রতিদিন আমাদের সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে ফেরেশতাদের মাধ্যমে উত্তম সাক্ষ্য পেশ করা হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button