ডিআইজির বোনের জামাই খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের ক্ষমতার উৎস কোথায়?

বিশেষ প্রতিনিধি
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় চাঁদাবাজি, বিভিন্ন স্থান থেকে চাঁদার ভাগ নেওয়া এবং থানার ওসিদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথিত কথোপকথনের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর অভিযুক্ত বিএনপি নেতা খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের বিরুদ্ধে এবার প্রতিবেশীর জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলাজুড়ে তাকে নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলছে।
খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেল মাদারগঞ্জ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি ওই এলাকার প্রয়াত গোলাম আম্বিয়ার ছেলে। অভিযোগকারী গোলাম মোস্তফা একই এলাকার প্রয়াত মাগফেরাত আলী তালুকদারের ছেলে। এদিকে, চাঁদাবাজির স্বীকারোক্তিমূলক একটি অডিও ভাইরাল হওয়ার পরেও উপজেলা কিংবা জেলা বিএনপি তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদ মাসুদ তালুকদার সোহেলের ক্ষমতার উৎস আসলে কোথায়? এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সোহেল তালুকদারের সঙ্গে প্রতিবেশী গোলাম মোস্তফার দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। তিনি জোরপূর্বক তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মোস্তফার বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ির বেড়া ভেঙে দেন এবং সীমানায় থাকা গাছ কেটে নিয়ে সেখানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। এ নিয়ে মামলা দায়ের করা হলেও পেশকারের যোগসাজশে মামলার তদন্ত রিপোর্ট ও মূল নথি সরিয়ে ফেলা হয়। পরবর্তীতে গোলাম মোস্তফা দায়রা জজ আদালতে আপিল করে নথিগুলো উদ্ধার করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সোহেল তালুকদার একজন ডিআইজির বোনের জামাই হওয়ায় তার বিরুদ্ধে থানায় বা সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর এবং ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট জামালপুরের পুলিশ সুপারের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা নিয়ে কর্তব্যরত এসআই তদন্তে গেলে সোহেলের লোকজন কাগজটি ছিঁড়ে ফেলে। এছাড়া, ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার থানাকে ব্যবস্থা নিতে বললেও মাদারগঞ্জ মডেল থানা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পরবর্তীতে, এক এসআই থাকাকালে সোহেলের লোকজন মোস্তফার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার স্ত্রী ও সন্তানকে মারধর করে এবং তাদের হাত ভেঙে দেয়।
বর্তমানে মোস্তফার বাড়ির গেট ভাঙচুর করে গেটের সামনে গোবরের স্তূপ ফেলে যাতায়াতের রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে, যা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। গোলাম মোস্তফা বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, বিভিন্ন সময়ে মোস্তফা ও তার পরিবারের ওপর নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ তৎকালীন এসআই নজরুল, ওয়াজি উর রহমান, জিন্নাহ এবং ওয়াজেদ সাহেদের কাছে রয়েছে। অভিযুক্ত সোহেল তালুকদার এলাকায় তার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অব্যাহত রেখেছেন এবং দাবি করেন যে, তার অনুমতি ছাড়া পুলিশ বা উপজেলা প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, গত ৫ আগস্টের পর সোহেল তালুকদার বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মিথ্যা মামলার হুমকি দেন। ডিআইজির বোনের জামাই হওয়ার সুবাদে তিনি চাকরি দেওয়া ও পুলিশ বদলির কথা বলে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোহেল তালুকদার জমি সংক্রান্ত বিরোধকে ‘দীর্ঘদিনের’ বলে উল্লেখ করেন, তবে ভাইরাল হওয়া অডিও নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।
মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মঞ্জুর কাদের খান বাবুল জানান, “অডিও এবং লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমরা জেলা বিএনপিকে জানিয়েছি।”
তবে জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন মুঠোফোনে জানান, “আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা বিষয়টি জানি না। আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।”
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ মিয়াও জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন এবং কোনো লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পাননি। তবে তিনি বলেন, “দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করলে দল অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
অন্যদিকে, জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম (পিপিএম-সেবা) জানান, “অফিস থেকে আমাকে একটি অভিযোগের বিষয়ে জানানো হয়েছে। একজন দক্ষ অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



