
অনলাইনে চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে নকল ওষুধ কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বহু মানুষ। এমনই এক ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো, যার ডায়াবেটিসের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে।
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের চটকদার বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ হয়ে ‘DCARE’ নামক একটি ডায়াবেটিসের ওষুধ কিনে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন এক ভুক্তভোগী। শুধু যে তিনি আর্থিক প্রতারণার শিকার হয়েছেন তাই নয়, এই নকল ওষুধ সেবনের ফলে তার ডায়াবেটিসের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
প্রতারণার শুরু যেভাবে
ভুক্তভোগী জানান, তিনি ফেসবুকে ‘DCARE’ নামের একটি পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখেন, যেখানে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞাপনে বিশ্বাস করে তিনি অনলাইনে দুই কৌটা ওষুধ অর্ডার করেন। পণ্যের কৌটার গায়ে ৪৫টি ট্যাবলেট থাকার কথা উল্লেখ থাকলেও, প্রতিটি কৌটা খোলার পর তিনি মাত্র ২৭টি করে ট্যাবলেট পান।
ওষুধের কার্যকারিতা এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি
তিনি আরও বলেন, “ট্যাবলেটের সংখ্যা কম থাকলেও হয়তো আমি এতটা হতাশ হতাম না, যদি ওষুধটি সত্যিই কাজ করত।” প্রতারকদের বিজ্ঞাপনে বিভ্রান্ত হয়ে তিনি তার নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধ সেবন বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘DCARE’ সেবনের পর তার স্বাস্থ্যের উন্নতি তো হয়ইনি, উল্টো ডায়াবেটিসের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়, যা তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ ও অসদাচরণ
এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ভুক্তভোগী ফেসবুক থেকে প্রাপ্ত নম্বরে ফোন করেন। তার অভিযোগ, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি নিজেকে বিক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেয়। প্রথমে নতুন গ্রাহক ভেবে ভালোভাবে কথা বললেও, যেই মুহূর্তে ওষুধের পরিমাণ কম থাকা এবং এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়, তার সুর পাল্টে যায়। বিক্রেতা দায়সারাভাবে জানান যে “কৌটায় ২৭ থেকে ৩০টি ট্যাবলেটই থাকে” এবং দশ মিনিট পর ফোন করবেন বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর সারাদিনে তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি।
অনলাইন প্রতারণা এখন সর্বত্র
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুকে এ ধরনের নকল ও অনুমোদনহীন ওষুধের বিজ্ঞাপন প্রায়ই দেখা যায়। [৭] অসাধু চক্রগুলো ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে ব্যবসা করছে। [১] শুধু ডায়াবেটিস নয়, ক্যান্সার, হৃদরোগ, কিডনি রোগের মতো জটিল রোগের নিরাময়ের কথা বলেও ভুয়া ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে। [৯] বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (WHO) ডায়াবেটিসের নকল ওষুধ নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে। [৬]
এই ধরনের প্রতারকদের ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য চিকিৎসক বা অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে ওষুধ না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। [৪] কোনো ওষুধের প্যাকেজিং, রঙ বা আকারে সন্দেহ হলে তা এড়িয়ে চলার কথাও বলা হয়েছে। [৫] ভুক্তভোগী এই প্রতারণার বিচার চেয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ জানিয়েছেন এবং অন্য সবাইকে এই ধরনের প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।



