রূপায়ণের বিরুদ্ধে সোনারগাঁয়ে সাড়ে ৭ কোটি টাকার সরকারি জমি বিক্রির পাঁয়তারা, তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার: সোনারগাঁ উপজেলা পৌরসভাধীন সরকারি জমি আত্মসাতের পর তা বিক্রির পাঁয়তারা করছে রূপায়ণ গ্রুপ। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায়, প্রথমে অসহায় ভূমিহীনদের জমি দেওয়া হবে বলে সাইনবোর্ড সাঁটিয়েছিল রূপায়ণ। এখন সেই সরকারি জমি বিক্রির জন্য ফার্নিচার ব্যবসায়ী গাজী জুয়েলের সঙ্গে এক কোটি টাকার মৌখিক বায়না চুক্তি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫৪ শতাংশ এই জমির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা।
সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের পশ্চিম গেট সংলগ্ন এই জমির খাজনা বিগত ৪৩ বছর ধরে উপজেলা পরিষদ পরিশোধ করে আসছে। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের অধিগ্রহণ করা (অ্যাকোয়ার্ড) জমি কীভাবে রূপায়ণ গ্রুপ বিক্রি করার সাহস পায়? তাদের খুঁটির জোর কোথায়?
জানা গেছে, এই জমি নিয়ে জয়রামপুর নিবাসী শ্রী উৎপল কুমার রায় নারায়ণগঞ্জ কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন, যা পরিচালনা করছেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রূপায়ণ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট লিমিটেডের সহকারী ল্যান্ড অফিসার সাখাওয়াত এই প্রক্রিয়ার ‘নাটের গুরু’ এবং তিনি রূপায়ণ গ্রুপের এমডি আবুল কালাম আজাদের যোগসাজশে এই অপকর্ম করছেন।
এ ব্যাপারে ফার্নিচার ব্যবসায়ী গাজী জুয়েল বলেন, “তাদের সঙ্গে তো কয়েকটি গ্রুপের কথা হয়েছে। এখানে সামনে ও পেছনে জায়গা আছে। আমার সঙ্গে এখনো কথা চূড়ান্ত হয়নি। তারা জমির খাজনা-খারিজ দিয়ে কাগজপত্র ঠিক করলে তারপর লেনদেন হবে।” এক কোটি টাকা বায়নার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে জুয়েল বলেন, “ব্যবসা করতে গেলে মানুষ কত কথাই বলে। আমি কি পাগল যে কাগজপত্র ঠিক না করে এক কোটি টাকা তাদের দিয়ে দেব?” জমিটি সরকারি কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি জানি এটা সরকারি জায়গা না, তবে ভলিউমে ‘ইউএনও’ লেখা আছে। যেহেতু ভলিউমে ইউএনও লেখা, তাই তারা সরকারি ঝামেলা মিটিয়েই বিক্রি করবে। অল্প কিছু জায়গা নিয়ে রূপায়ণের সঙ্গে উপজেলার মামলা চলছে। আবার জমিতে ভূমিহীনদের দেওয়া হবে বলে সাইনবোর্ডও লাগানো আছে।”
এ বিষয়ে রূপায়ণ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট লিমিটেডের উপদেষ্টা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “হ্যাঁ, ওই জমি বিক্রি করতে পারি। যদি ওটা ওখানে না করে আরেক জায়গায় করি… ওটা তো ভূমিহীনদের দেওয়ার জন্য ছিল। এটা বিক্রি করে অন্য জায়গায় দিলে সমস্যা কোথায়?” জমিটি রূপায়ণের কিনা এবং দলিল, খাজনা ও মিউটেশন তাদের নামে আছে কিনা জানতে চাইলে আজাদ বলেন, “জি, আছে। সবই আছে।” জমিটি সরকারি, এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, “এটা সরকারি জায়গা হলে কাগজপত্র দেখেন। রূপায়ণ একটা মাল্টি-বিলিয়ন কোম্পানি, সরকারি জায়গা হলে কি রূপায়ণ সাইনবোর্ড লাগাবে? আরেকটা কথা, আপনারা সাংবাদিকরা কেন এটা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন? সরকারি জায়গা হলে তো সরকারি লোকজন আছেন সেটা দেখার জন্য। সরকার কি এতই দুর্বল? এটা নিয়ে সাংবাদিকদের রিপোর্ট করতে হবে?” আজাদ আরও বলেন, “আরে বাবা, সরকার কি এতই দুর্বল যে একটা কোম্পানি সরকারি জায়গা দখল করে নেবে, আর সরকার বসে থাকবে? আমি যতটুকু জানি, এটা রূপায়ণের জমি, সব কাগজপত্র আমাদের আছে। যদি সরকারের হয়, তাহলে সরকার আদালতে গিয়ে মামলা করবে। আপনারা সাংবাদিক হয়ে এতকিছু করছেন কেন? রূপায়ণ যদি একজন গরিবের জমি দখল করত, তাহলে আপনারা লিখে তাদের সাহায্য করতেন। সরকারি জমি হলে সরকারের অনেক লোকবল আছে, তারাই দেখবে। আরও কিছু জানতে হলে রূপায়ণের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেন।”
এ ব্যাপারে সোনারগাঁয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড বলেন, “রূপায়ণকে তাদের মালিকানার কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। তারা কাগজপত্র জমা দিলে আমরা সিদ্ধান্ত জানাব।” জমিটি অধিগ্রহণকৃত কিনা, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নথি বা ফাইলপত্র দেখে বলতে হবে। উপজেলা পরিষদ বা এলএ শাখায় ফাইল আছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকারি জায়গা নিয়ে নিউজ করছেন, এটা ভালো কাজ। আপনারা নিউজের মাধ্যমে তথ্য দিলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব। এ জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।”
এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার মোবাইল নম্বরে কয়েকবার এসএমএস পাঠিয়ে এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়েও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের সিএ (অফিস সহকারী) রাজু বলেন, “হ্যাঁ, উপজেলা পরিষদ এই জমির খাজনা দিচ্ছে। খাজনার রসিদ আপনারা ইউএনও স্যারের কাছ থেকে চেয়ে নিন।”



