আপনি কি ‘লুমাজাহ’? মুখের ওপর উচিত কথা বলা নিয়ে কোরআনের কঠিন হুঁশিয়ারি

কথার মাধ্যমে অন্যকে আঘাত করা এবং এ নিয়ে গর্ববোধ করাকে ইসলামে ‘লুমাজাহ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের জন্য সুরা হুমাজাহ-তে রয়েছে ধ্বংসের সতর্কবার্তা।
ইসলামিক ডেস্ক: আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যারা নিজেদের “স্পষ্টভাষী” বা “ঠোঁটকাটা” হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন। কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে পারিবারিক আড্ডা—সবখানেই তারা “মুখের ওপর উচিত কথা” বলার দাবি করেন। কোনো রকম রাখঢাক না করে অন্যের ভুল ধরিয়ে দেওয়া বা কঠোর সমালোচনা করাকে তারা নিজেদের সৎ সাহসের পরিচায়ক বলে মনে করেন। কিন্তু ইসলাম এই আচরণকে কীভাবে দেখে? পবিত্র কোরআনে এই স্বভাবের মানুষদের জন্য রয়েছে এক কঠোর সতর্কবার্তা।
‘লুমাজাহ’ কারা এবং তাদের বৈশিষ্ট্য
ইসলাম এর পরিভাষায়, যারা কথায় বা ইঙ্গিতে অন্যকে দোষারোপ করে, সামনাসামনি বা পেছনে অপমান করে এবং এই কাজ করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে, তাদেরকেই ‘লুমাজাহ’ বলা হয়। এর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো:
- অন্যকে বিদ্রূপ করা: কথায়, ইশারায় বা ব্যঙ্গ করে অন্যকে ছোট করা।
- কঠোর সমালোচক: সংশোধনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং অপমান করার উদ্দেশ্যে অন্যের ভুলত্রুটি জনসমক্ষে তুলে ধরা।
- অহংকার ও গর্ব: নিজের এই “স্পষ্টভাষী” স্বভাব নিয়ে গর্ব করা এবং নিজেকে নির্ভীক মনে করা।
- সহানুভূতিহীনতা: অন্যের অনুভূতি বা সম্মানের প্রতি কোনো তোয়াক্কা না করা।
সহজ কথায়, যে ব্যক্তি নিজের “স্ট্রেইটফরোয়ার্ড” বা সোজাসাপ্টা স্বভাবের দোহাই দিয়ে অন্যের হৃদয়ে আঘাত হানে, সেই ‘লুমাজাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত।
কোরআনের কঠোর সতর্কবার্তা
পবিত্র কোরআনের ১০৪ নম্বর সুরা ‘আল-হুমাজাহ’-তে আল্লাহ তাআ’লা সরাসরি এই শ্রেণীর মানুষদের উদ্দেশ্য করে কথা বলেছেন। সুরার শুরুতেই বলা হয়েছে:
” দুর্ভোগ প্রত্যেকের জন্য, যে সামনে ও পেছনে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়।”
এই আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা ‘লুমাজাহ’ (সামনে নিন্দাকারী) ও ‘হুমাজাহ’ (পেছনে নিন্দাকারী) উভয়ের জন্য অনিবার্য ধ্বংস বা দুর্ভোগের ঘোষণা দিয়েছেন। যারা মনে করে তাদের এই আচরণ কোনো সাধারণ বিষয়, তাদের জন্য এটি একটি ভয়াবহ সতর্কসংকেত। আল্লাহ তাদের এই কাজের জন্য শুধু অসন্তুষ্টই নন, বরং তাদের প্রতি কঠোর লানত বা অভিসম্পাত করেছেন।
ইসলামে নম্রতা ও উত্তম আচরণের গুরুত্ব
ইসলাম কঠোরতা বা রূঢ়তাকে কখনোই সমর্থন করে না। বরং নম্রতা, সহনশীলতা এবং সুন্দরভাবে কথা বলাকে ঈমানের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করে। হাদিসে এসেছে, “আল্লাহ যাকে নম্রতা দিয়েছেন, তিনি দুনিয়ার সেরা নেয়ামত পেয়ে গেছেন।”
কাউকে সংশোধন করার প্রয়োজন হলে তা গোপনে, সুন্দর ও নম্র ভাষায় করার নির্দেশ দেয় ইসলাম। জনসমক্ষে কাউকে অপমান করে নয়, বরং একান্তে ভালোবাসা ও সহানুভূতির সাথে তার ভুল ধরিয়ে দেওয়াই প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য।
অতএব, “উচিত কথা মুখের ওপর বলে দেওয়া” কোনো গর্বের বিষয় নয়, বরং এটি একটি মারাত্মক গুনাহ যা মানুষকে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র বানাতে পারে। আসুন, আমরা নিজেদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করি, অন্যের প্রতি আরও সংবেদনশীল ও সহনশীল হই এবং ‘লুমাজাহ’-এর মতো ধ্বংসাত্মক স্বভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করি।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করার এবং উত্তম আচরণ লালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।



