ইসলাম ধর্ম

আল্লাহ’ শব্দের অলৌকিক ব্যাখ্যায় মুগ্ধ জর্ডানের শ্রেণিকক্ষ, স্প্যানিশ ছাত্রীর ইসলাম গ্রহণ

জর্ডানের ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষার ক্লাসে এক খ্রিস্টান ছাত্রীর ‘আল্লাহ’ নামের গভীর ধ্বনিগত ও কাঠামোগত ব্যাখ্যায় মুগ্ধ হন অধ্যাপক ও সহপাঠীরা। এই ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জর্ডানের বিখ্যাত ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ আরবি ভাষার ক্লাস ইন্টারনেটে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ক্লাসে ‘আল্লাহ’ শব্দের ভাষাগত ও ধ্বনিগত অলৌকিকতা নিয়ে এক স্প্যানিশ ছাত্রীর দেওয়া ব্যাখ্যায় উপস্থিত সবাই মুগ্ধ ও বিস্মিত হয়েছেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্রী ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি পোস্টের মাধ্যমে আলোচনায় আসে, যা বহু মানুষকে আবেগাপ্লুত করেছে।

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

ইয়ারমুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি ভাষা বিভাগে স্নাতকোত্তর দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসে অধ্যাপক ফাখরি কাতানাহ শিক্ষার্থীদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখেন। তিনি জানতে চান, “কে ‘আল্লাহ’ নামটির অলৌকিক ও ধ্বনিবিজ্ঞানগত দিক থেকে ব্যাখ্যা করতে পারবে?”

শিক্ষার্থীরা যখন নীরব, তখন হাত তোলেন হেলেন নামের একজন স্প্যানিশ ছাত্রী। তিনি খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও আরবি ভাষায় ছিলেন অত্যন্ত পারদর্শী।

ধ্বনিগত অলৌকিকতার ব্যাখ্যা

হেলেন তার বক্তব্য শুরু করেন ‘আল্লাহ’ শব্দটিকে আরবি ভাষায় তার পড়া সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হিসেবে অভিহিত করে। তিনি বলেন, এই নামটি উচ্চারণের সময় ঠোঁটের কোনো ব্যবহার হয় না, বরং এর প্রতিটি অক্ষর কণ্ঠের গভীর থেকে আসে। তিনি উপস্থিত সবাইকে শব্দটি উচ্চারণ করে বিষয়টি অনুধাবন করতে বলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এই পবিত্র নামে কোনো নুকতা বা বিন্দু নেই এবং এটি ঠোঁটের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারণ করা যায়। এর ফলে কেউ যদি নীরবেও আল্লাহর নাম স্মরণ করতে চায়, তার পাশের ব্যক্তিও তা বুঝতে পারবে না।”

নামের অক্ষরের ঐশ্বরিক বিন্যাস

হেলেন এরপর ‘আল্লাহ’ শব্দের কাঠামোগত অলৌকিকতার দিকে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, এই নামের বিশেষত্ব হলো, এর থেকে এক বা একাধিক অক্ষর সরিয়ে ফেলার পরেও নামটি তার ঐশ্বরিক অর্থ হারায় না।

তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখান:

  • ‘আল্লাহ’ (ٱللّٰهُ) থেকে প্রথম অক্ষর ‘আলিফ’ বাদ দিলে হয় ‘লিল্লাহ’ (لِلّٰهِ), যার অর্থ ‘আল্লাহর জন্য’। এটি পবিত্র কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে।
  • প্রথম ‘আলিফ’ এবং প্রথম ‘লাম’ বাদ দিলে থাকে ‘লাহু’ (لَهُ), যার অর্থ ‘তাঁরই জন্য’। এই রূপটিও কুরআনে বিদ্যমান।
  • এমনকি প্রথম দুটি অক্ষর এবং একটি ‘লাম’ সরিয়ে দিলে অবশিষ্ট থাকে ‘হু’ (هُوَ), যার অর্থ ‘তিনি’, এবং এটিও আল্লাহকে নির্দেশ করে, যা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখ রয়েছে।

হেলেন আরও বলেন, ইসলামের প্রধান স্তম্ভ শাহাদা বা তাওহিদের বাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর মূল অক্ষরগুলো (আলিফ, লাম, হা) এত সহজভাবে উচ্চারণ করা যায় যে, মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তিও কোনো কষ্ট ছাড়াই তা পাঠ করতে পারেন।

ইসলাম গ্রহণ ও নতুন পরিচয়

এই গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যার পর শ্রেণিকক্ষে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে জানা যায়, হেলেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন এবং নিজের জন্য ‘আবিদাহ’ নামটি বেছে নিয়েছেন, যার অর্থ ‘উপাসক’।

ঘটনাটি যিনি ইন্টারনেটে শেয়ার করেছেন, তিনি মুসলিমদের জন্য এটি একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা মুসলিম হয়েও এই নামের গভীরতা হয়তো কখনো এভাবে ভেবে দেখিনি।” তিনি সবাইকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাণী, “আমার পক্ষ থেকে পৌঁছে দাও, যদিও তা একটি আয়াতই হয়” (বুখারি: ৩৪৬১), স্মরণ করিয়ে দিয়ে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button