বিএসএফের ‘পুশ-ইন’ অস্বীকার: মহাপরিচালককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদের
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৫৬তম মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মিথ্যা, তথ্যবিকৃত, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করেছে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই কথা বলেন সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা আল ইহযায।
এ সময় তিনি বলেন, “বৃহস্পতিবার বিজিবির সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত বিজিবি-বিএসএফের চার দিনব্যাপী যৌথ সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালক দাবি করেন, ‘বিএসএফ বাংলাদেশে কাউকে পুশ-ইন করেনি, অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। নিয়ম মেনে সবাইকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, তথ্যবিকৃত, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।”
প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ অমানবিক আচরণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিরাপত্তা আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, যা সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা থেকে প্রমাণিত। গত ২৩ মে ২০২৫ কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসামের মরিগাঁও জেলার শিক্ষক খাইরুল ইসলামসহ ১৪ জনকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ চোখ বেঁধে, নির্যাতন করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঠেলে দেয়। অথচ খাইরুল ইসলামের নাগরিকত্বের মামলা তখনো ভারতের সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল।
ফেনী সীমান্তে ২২ মে ২০২৫ ভারতের হরিয়ানার পাঁচজন নারী ও শিশুকে রাতের আঁধারে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে ফেনী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। পরে বিজিবি তাদের উদ্ধার করে। তারা জানিয়েছেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছে এবং সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করেছে।
ইউএনএইচসিআর কার্ডধারী রোহিঙ্গা (মে ২০২৫): আসামের মাটিয়া ক্যাম্প থেকে পাঁচজন নিবন্ধিত রোহিঙ্গাকে চোখ বেঁধে সীমান্তে এনে বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শরণার্থীদের এভাবে ফেরত পাঠানো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করছি।
গত ২৫ জুন ২০২৫ অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুসহ ভারতীয় নাগরিকদের পুশ-ইন করা হয়। তাদেরকে দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এর মধ্যে ছয়জন ভারতীয় নাগরিকের আধার কার্ড ও নাগরিকত্বের প্রমাণপত্রও ছিল—তাদেরকেও বাংলাদেশে পুশ-ইন করা হয়েছে। এদের মধ্যে দিল্লির সাহেবাবাদ গ্রামের মো. দানেশের স্ত্রী মোছা. সোনালি খাতুন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এভাবে নারী ও শিশুসহ নিজ দেশের নাগরিকদের সীমান্তে ঠেলে দেওয়া শুধু অমানবিকই নয়, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও জেনেভা কনভেনশনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বর্তমানে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে।
“সীমান্তে কেবলমাত্র আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো হয়”—বিএসএফ মহাপরিচালকের এমন বক্তব্য “নির্লজ্জতার সর্বনিম্ন সীমা ছাড়িয়ে গেছে” উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গত তিন বছরে বিএসএফ নির্বিচারে সীমান্তে গুলি করে শতাধিক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিককে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে কৃষি-শ্রমিক, গরু রাখাল এমনকি শিশুও রয়েছে।”
এসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে বিজিবি ভিডিও ফুটেজ, স্থানীয় বাসিন্দাদের সাক্ষ্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আমরা ইতোমধ্যে সংরক্ষণ করেছি, যা প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে উপস্থাপন করা হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সীমান্ত হত্যার বিচার চাওয়া হবে।
আমরা বিএসএফ মহাপরিচালক দলজিৎ সিং চৌধুরীকে অবিলম্বে তাঁর মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশের জনগণের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সর্বদা কূটনৈতিক সৌজন্যের মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সুসম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষে। তবে যদি বিএসএফ মহাপরিচালকের এই মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা করা না হয়, তাহলে সার্বভৌমত্ব সুরক্ষা পরিষদ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। প্রয়োজনে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ লংমার্চসহ নানাবিধ গণ-আন্দোলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর দায়ভার সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকেই বহন করতে হবে।



