মানববন্ধন

কুমিল্লা কোতয়ালীর ও মিথ্যা মামলা বাণিজ্য ও সাংবাদিক হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং আটক বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ যেন টেকনাফের ওসি প্রদীপের পুনরাবৃত্তি।

এম শাহীন আলম: কুমিল্লা কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিনুল ইসলাম এবং জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মিথ্যা ও ‘গায়েবি’ মামলা বাণিজ্য, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, সাংবাদিকদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো এবং আটক বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যমে তারা কুমিল্লায় একটি ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছেন বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে ‘গায়েবি মামলা বাণিজ্য’

মূল অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের কোটা সংস্কার আন্দোলন। অভিযোগ উঠেছে, এই আন্দোলনকে পুঁজি করে ওসি মহিনুল ইসলাম অসংখ্য নিরীহ মানুষ, এমনকি প্রবাসীদেরও মামলার আসামি করেছেন।

এর একটি উদাহরণ মালদ্বীপ প্রবাসী সাইফুল। গত ১ সেপ্টেম্বর তাকে সাদা পোশাকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় এবং পরে ছাত্র আন্দোলনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখায়। অথচ তার পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, সাইফুল গত দুই বছর দেশেই ছিলেন না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আর্থিক লেনদেনে বনিবনা না হলেই আটক ব্যক্তিদের এ ধরনের গায়েবি মামলায় চালান করে দেওয়া হচ্ছে।

নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার

ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের অভিযোগও উঠেছে ওসি মহিনুলের বিরুদ্ধে।

  • সাইফুল বিন আফছার: তাকে থানায় ডেকে এনে একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। রাজি না হওয়ায় তাকে উল্টো চাঁদাবাজির মামলায় জেলে পাঠানো হয়।
  • রাসেল: পারিবারিক দ্বন্দ্বে তার প্রভাবশালী চাচার পক্ষ নিয়ে ওসি মহিনুল তাকে এক বছর আগের ছাত্র আন্দোলনের তিনটি মামলায় আসামি করে জেলে পাঠান।

সাংবাদিকদের দমনে পরিকল্পিত ফাঁদ

সত্য প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগও অত্যন্ত গুরুতর।

  • এম শাহীন আলম: ‘অপরাধ বিচিত্রা’র এই প্রতিবেদক ওসি মহিনুল ও এসপি নাজিরের নানা অনিয়ম নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করায় তাকে টার্গেট করা হয়। অভিযোগ, তাকে পরিকল্পিতভাবে একজন নারীর মাধ্যমে একটি হোটেলে ডেকে নিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
  • শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া: এই সাংবাদিক নিজেই অপহরণ ও ছিনতাইয়ের শিকার হন। কিন্তু অপহরণকারীরা তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিলে, ওসি মহিনুল তাকে সাহায্য না করে উল্টো ছাত্র আন্দোলনের মামলায় আসামি করে আদালতে পাঠিয়ে দেন।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা

অভিযুক্ত পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। গাজীপুরে কর্মরত থাকাকালীনও তিনি নানা কারণে বিতর্কিত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে সরকারের পক্ষে দমন-পীড়নে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তার নির্দেশেই ওসি মহিনুল কুমিল্লায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে মনে করছেন অনেকে।

দেশব্যাপী প্রতিবাদ ও বিচার দাবি

এই পুলিশ কর্মকর্তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো এবং সচেতন নাগরিক সমাজ দেশব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তাদের দাবি, অবিলম্বে এসপি নাজির আহমেদ ও ওসি মহিনুল ইসলামকে বরখাস্ত করে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং তাদের দায়ের করা সকল মিথ্যা ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button