ইসলাম ধর্ম

পুলসিরাত পার হলেই কি জান্নাত? জানুন আখেরাতের দুই বিস্মৃত ধাপ ‘আ’রাফ’ ও ‘কান্তারা’ সম্পর্কে

কেবল স্রষ্টার হক নয়, বান্দার হক নষ্ট করার চূড়ান্ত বিচার হবে সিরাত পার হওয়ার পর। সেদিন ইবাদত থাকা সত্ত্বেও অনেকে দেউলিয়া হয়ে যাবে।

ইসলামিক ডেস্ক: জান্নাত আর জাহান্নাম—আখেরাতের পরিণতি নিয়ে আমাদের ধারণা মূলত এই দুটিকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু স্থানের বর্ণনা রয়েছে, যা আমাদের চিরাচরিত ধারণার বাইরে এবং অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এমনই দুটি স্থান হলো ‘আ’রাফ’ এবং ‘আল-কান্তারা’

জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান: আ’রাফ

সাধারণত মনে করা হয়, বিচারের পর মানুষের শেষ ঠিকানা হবে হয় জান্নাত, নয়তো জাহান্নাম। কিন্তু সূরা আল-আ’রাফ আমাদের জানায়, এই দুই স্থানের মাঝে আরও একটি অবস্থানস্থল রয়েছে।

  • কারা থাকবেন আ’রাফে?
    এই স্থানে থাকবেন সেই সকল মানুষ, যাদের ভালো ও মন্দ কাজের পরিমাণ প্রায় সমান। অর্থাৎ, তাদের নেকির পাল্লা জান্নাতে যাওয়ার মতো ভারী নয়, আবার গুনাহের পাল্লাও জাহান্নামে যাওয়ার মতো গুরুতর নয়।
  • আ’রাফবাসীদের অবস্থা:
    তারা জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ই দেখতে পাবে। জান্নাতের দিকে তাকিয়ে তারা আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা করবে এবং জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে তারা আতঙ্কিত হয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। তারা সর্বদা আল্লাহর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকবে।

পুলসিরাতের পরের পরীক্ষা: ‘আল-কান্তারা’

আমাদের অনেকেরই ধারণা, পুলসিরাত পার হতে পারলেই জান্নাত নিশ্চিত। কিন্তু হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী, এটিই শেষ ধাপ নয়। পুলসিরাত পার হওয়ার পর মুমিনদের আরও একটি সেতুর ওপর থামানো হবে, যার নাম ‘আল-কান্তারা’।

  • দুই দফায় বিচার:
    হাশরের ময়দানে প্রথম বিচারটি হবে স্রষ্টার হক বা হক্কুল্লাহ সম্পর্কিত। এই বিচারে যারা উত্তীর্ণ হয়ে পুলসিরাত পার হবেন, তাদের থামানো হবে কান্তারায়।
  • বান্দার হকের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি:
    কান্তারার ওপর অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় বিচার, যা বান্দার হক বা হক্কুল ইবাদ সম্পর্কিত। দুনিয়াতে একজন মুমিন অন্য মুমিনের সাথে যে অন্যায়—যেমন জুলুম, গীবত, আত্মসাৎ বা যেকোনো ধরনের হক নষ্ট করেছে—তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি এখানেই হবে। একে অপরের পাওনা মিটিয়ে দেওয়ার পরই কেবল জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি মিলবে।

কে সেই ‘মুফলিস’ বা প্রকৃত দেউলিয়া?

এই কান্তারার বিচারই নির্ধারণ করে দেবে কে真正的 ধনী আর কে দেউলিয়া। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ বিষয়ে এক ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সাহাবিদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন:

“আমার উম্মতের মধ্যে প্রকৃত দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিনে অনেক নামাজ, রোজা ও সদকা নিয়ে উপস্থিত হবে, কিন্তু সে দুনিয়াতে কাউকে গালি দিয়েছিল, কারও ওপর অপবাদ দিয়েছিল, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছিল বা কাউকে প্রহার করেছিল। সেদিন তার সমস্ত সৎকর্মগুলো থেকে ভুক্তভোগীদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হবে। যদি তার ভালো কাজগুলো পাওনা পরিশোধের আগেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে ভুক্তভোগীদের পাপের বোঝা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”

চূড়ান্ত সতর্কবার্তা

আ’রাফ ও কান্তারার এই ধারণা আমাদের শেখায় যে, আল্লাহর কাছে ইবাদতের পাশাপাশি বান্দার হকের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু নামাজ, রোজা ও ব্যক্তিগত ইবাদত নাজাতের জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে, যদি আমাদের দ্বারা অন্য কোনো মানুষ কষ্ট পায় বা তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়। তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, ইবাদতের পাশাপাশি নিজের আচরণ, ভাষা এবং লেনদেনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা। কারণ, চূড়ান্ত ফয়সালার জন্য হয়তো অপেক্ষা করতে হবে কান্তারায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button