শেখ মুজিবকে গোলাম আযমের বই উপহার: ক্ষমতা ও ভালোবাসার ভিন্ন দুই পথের গল্প

এক ঐতিহাসিক সৌজন্যের স্মৃতিচারণ থেকে বর্তমান ইসলামপন্থী রাজনীতির আত্মসমালোচনা—একটি ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ।
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: অধ্যাপক গোলাম আযম শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট বই উপহার দিয়ে দাওয়াতি কাজ করেছিলেন। তিনি শেখ মুজিবকে মাওলানা মওদূদীর লেখা ‘Islamic Law & Constitution’ বইটি উপহার দিয়েছিলেন। বইটির প্রথম পাতায় তিনি লিখেছিলেন, ‘To my dear friend Sheikh Mujib’ এবং নিচে নিজের নাম স্বাক্ষর করেন। পরবর্তীতে বইটির বাংলা অনুবাদ ‘ইসলামী রাষ্ট্র ও সংবিধান’ নামে প্রকাশিত হয়। মাওলানা মওদূদীর লেখা মূল উর্দু বইটির নাম ছিল ‘ইসলামী রিয়াসাত’।
তৎকালীন ছাত্র সংঘের নেতা ও সাংবাদিক চৌধুরী মুঈন উদ্দীন একবার শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নিতে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে শেখ সাহেবের স্টাডি রুমে তিনি মাওলানা মওদূদীর সেই বইটি দেখতে পান। শেখ মুজিব তাকে বলেছিলেন, “তুমি মনে করো না যে, আমি তোমাদের বইপত্র পড়ি না।” এর অর্থ হলো, অধ্যাপক গোলাম আযম তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো থেকে বিরত থাকেননি।
মাওলানা মওদূদী, শেখ মুজিবুর রহমান ও অধ্যাপক গোলাম আযম—ইতিহাসের তিন আলোচিত চরিত্র। শেখ মুজিব ছিলেন মাওলানা মওদূদীর চেয়ে ১৭ বছরের ছোট। মাওলানার সঙ্গে অধ্যাপক গোলাম আযমের বয়সের ব্যবধান ছিল ১৯ বছরের। অন্যদিকে, শেখ মুজিব এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের বয়সের ব্যবধান ছিল মাত্র ২ বছরের এবং তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও ছিল। অথচ সেই মুজিবের মেয়েই তাকে শেষ বয়সে জেলে পাঠিয়েছিলেন।
মাওলানা মওদূদী এবং অধ্যাপক গোলাম আযম কেউই রাষ্ট্রীয় কোনো পদ-পদবি গ্রহণ করেননি। অধ্যাপক গোলাম আযম যখন এমপি-মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, তখনই রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। মাওলানা মওদূদী দলীয় প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর আরও সাত বছর বেঁচে ছিলেন। অন্যদিকে, শেখ মুজিব রাজনীতির সর্বোচ্চ পদ অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। আজ পৃথিবী কাকে কীভাবে স্মরণ করছে? মাওলানা মওদূদী ও অধ্যাপক গোলাম আযমের জন্য আজও বিশ্বজুড়ে মানুষ দোয়া করে, চোখের অশ্রু ফেলে ভালোবাসা প্রকাশ করে।
আজ ইসলামপন্থীদের অনেকের মধ্যেই ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমতার চেয়ারে বসার তীব্র লোভ প্রকট হয়ে উঠেছে; কারও কারও যেন জিহ্বা ঝুলে বেরিয়ে এসেছে। কে কাকে ডিঙিয়ে, কাকে দমিয়ে বা কার সঙ্গে সিন্ডিকেট করে মনোনয়ন বাগাতে পারে, সেই অশুভ প্রতিযোগিতা চলছে। ইসলামকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আর নিজের ক্ষমতার লালসা—দুটো নিঃসন্দেহে ভিন্ন জিনিস। মনে রাখতে হবে, ক্ষমতা পাওয়া মানেই সম্মানিত হওয়া নয়। আল্লাহ আপনাকে চেয়ারম্যান-এমপি না বানিয়েও সম্মানিত করতে পারেন, আবার সবকিছু দিয়েও করতে পারেন অসম্মানিত।
(লাবিব আহসানের লেখা ‘ক্ষমতা বনাম ভালোবাসা’ অবলম্বনে)



