ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয়ের কারণ: একটি বিশ্লেষণ

অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে। দীর্ঘ ২৮ বছর পর ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ও বামপন্থী জোটের বাইরে ছাত্রদল প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়। ছাত্রদলের এই পরাজয়ের পেছনে নানা রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং কৌশলগত কারণ বিদ্যমান।
১. সাংগঠনিক দুর্বলতা
দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদলের কার্যক্রম ক্যাম্পাসে সক্রিয় ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে টেকসই নেতৃত্ব ও শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামোর অভাব ছিল। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি।
২. নেতৃত্ব সংকট
ছাত্রদলের অনেক নেতাকর্মী রাজনৈতিক মামলায় জড়িত থাকায় সক্রিয়ভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেননি। কেন্দ্র থেকে শক্তিশালী নেতৃত্ব ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে ঘাটতি ছিল। তরুণ প্রজন্মের কাছে আবেদন তৈরি করার মতো নেতৃত্ব গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
৩. ক্যাম্পাসে প্রভাবহীনতা
দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের একচ্ছত্র আধিপত্য বিরাজ করছিল। ছাত্রদল মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় অবস্থান নিতে পারেনি, ফলে ভোটারদের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়। হল-ভিত্তিক রাজনীতিতে সংগঠনটির উপস্থিতি ছিল দুর্বল।
৪. কৌশলগত ব্যর্থতা
শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, ছাত্রদল তা কাজে লাগাতে পারেনি। ভিন্নমতের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বিত জোট গঠনে ব্যর্থ হয়েছে। প্রচারণা ছিল সীমিত এবং ডিজিটাল মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ ছিল অপ্রতুল।
৫. জনসংযোগ ঘাটতি
তরুণ শিক্ষার্থীদের চাহিদা—যেমন: আবাসন, পরিবহন, নিরাপত্তা ও অন্যান্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা—বিষয়ে কার্যকর নির্বাচনী ইশতেহার উপস্থাপন করতে পারেনি। অতীতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারেনি।
৬. প্রতিকূল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
জাতীয় পর্যায়ে বিএনপির রাজনৈতিক দুর্বলতা ছাত্রদলের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তৎকালীন সরকারের সঙ্গে বিরোধী দলের রাজনৈতিক সংঘাত ও দমন-পীড়নের ফলে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।
সুতরাং, ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের পরাজয় শুধু নির্বাচনী বা কৌশলগত ব্যর্থতা নয়; বরং এটি ছিল দীর্ঘদিনের সাংগঠনিক দুর্বলতা, নেতৃত্ব সংকট এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থতার সম্মিলিত ফলাফল। ভবিষ্যতে ছাত্র রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে ছাত্রদলকে নতুন প্রজন্মের চাহিদা অনুযায়ী সংগঠনকে আধুনিক, গতিশীল এবং ছাত্র অধিকার-ভিত্তিক করে গড়ে তুলতে হবে।



