দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আয়ার সৎপুত্র ছাত্রনেতা বুলবুল এখন সভাপতি!

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, শুধুমাত্র ছাত্রদল নেতার পরিচয়ে ও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বারাত মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বর্তমানে এলাকাজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার বারাত মনোহরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস স্থানীয় এক রাজনৈতিক ব্যক্তির ইন্ধনে ও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বোর্ড কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে অবৈধভাবে এই কমিটি গঠন করেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোরের স্মারক নং ৩৭.১১.৪০৪১.৪৪১.০০.০০১.২০.৩৪, তারিখ: ০৩/১২/২০২৪ ইং পত্র অনুযায়ী, ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের) গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি প্রবিধানমালা, ২০২৪’-এর ৬৪(৩) ধারায় বলা হয়েছে, সভাপতির মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানপ্রধান জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনাক্রমে এলাকার শিক্ষানুরাগী, খ্যাতিমান সমাজসেবক, জনপ্রতিনিধি অথবা কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে তিনজনের একটি তালিকাসহ অন্যান্য সদস্যদের মনোনয়ন গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রেরণ করবেন।
অভিযোগ রয়েছে, যশোর শিক্ষা বোর্ডের উল্লেখিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস নিজের পুরোনো দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যে একই বিদ্যালয়ে কর্মরত আয়া সখিনার সৎপুত্র ও ছাত্রদল নেতা বুলবুলকে এক নম্বর সিরিয়ালে মনোনয়ন দিয়ে বোর্ডে পাঠান। বোর্ডে পাঠানো তালিকায় বুলবুলের পরিচয়ের কলামে ‘ডেপুটি ম্যানেজার, মনিটরিং (টিম), উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, ঢাকা’ উল্লেখ করা হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রবিধানমালার ৬৪(৩) ধারা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নির্দেশক্রমে বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান গত ১২ই মার্চ বুলবুলকে সভাপতি করে অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন দেন। প্রধান শিক্ষকের এ ধরনের ‘পকেট কমিটি’ গঠন করায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, “বুলবুল ঢাকায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোতে চাকরি করে। সে এই স্কুলেরই একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং তার সৎমা এখানেই আয়া পদে চাকরি করেন। সে কীভাবে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি হলো?”
এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার দাস বলেন, “এটা সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।” কোন ক্যাটাগরিতে বুলবুলকে সভাপতি করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে কথা বলতে চাইলে সরাসরি কথা বলতে হবে,” এই বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এই ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পীরজাদা মোর্শারফুল হকের পুত্র, শিক্ষানুরাগী, সাংবাদিক এবং বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য আ. আ. ম. একরামুল হক আসাদ আপত্তি তুললে বুলবুলের লোকজন (বাবলু, শওকত) তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। তাকে এলাকায় গেলে আক্রমণ করা হবে এবং প্রয়োজনে জানে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি অব্যাহত রয়েছে। মারুফ নামে এক নেতা জানিয়েছেন যে, এটি নাকি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। অভিযোগ উঠেছে, তালা উপজেলা ও পাটকেলঘাটা থানা ছাত্রদলের কতিপয় নেতাকে প্রভাবিত করে বুলবুল সাংবাদিক একরামুল হক আসাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।



