সোনারগাঁওয়ে ট্রান্সফরমার চুরি এবং গ্রাহকদের ভোগান্তি
মোঃ মোক্তার হোসাইন: সোনারগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি একের পর এক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটছে। ভাটিবন্দর, পিরোজপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামে রাতের আঁধারে একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই চুরির সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাত বারোটা থেকে একটার মধ্যে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় এবং প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকে। এ সময়েই ট্রান্সফরমার চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ ঘটে।
ভাটিবন্দর এলাকার বাসিন্দা শাহ কামাল বলেন, “পল্লী বিদ্যুতের এত উঁচু খুঁটিতে ওঠা সাধারণ মানুষের কাজ নয়। বিদ্যুতের কাজ না জানা কেউ কখনো ট্রান্সফরমার কাটতে বা নামাতে পারবে না। এখানেই সন্দেহ—এই চুরি করা ট্রান্সফরমার কোথায় বিক্রি হয়?”

পিরোজপুর এলাকার খোরশেদ আলম বলেন, “চোররা বিদ্যুৎ কখন যাবে আর কখন আসবে, তা আগে থেকেই জানে। রাতের আঁধারে এমন বিভ্রাট কি শুধু কাকতালীয়? দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই ভালো নয়, তার ওপর বিদ্যুৎ না থাকলে তো চোর-ডাকাতদের জন্য সুযোগ তৈরি হয়।”
এলাকার সাধারণ মানুষ জানান, একেকটি ট্রান্সফরমারের মূল্য প্রায় দুই লাখ আশি হাজার টাকা। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ট্রান্সফরমার চুরি হলে প্রথমবার এলাকাবাসীকে অর্ধেক অর্থ (১ লাখ ৪০ হাজার টাকা) পরিশোধ করতে হয়, আর দ্বিতীয়বার চুরি হলে পুরো টাকাটাই দিতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল দিতেই হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এত টাকা আমরা কোথায় পাব? চুরির ঘটনার পর এলাকাবাসীকে তিন দিন বিদ্যুৎ ছাড়া থাকতে হয়েছে এবং নতুন ট্রান্সফরমার বসাতে বিদ্যুৎ অফিসে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই আইন সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি বোঝা চাপাচ্ছে।”
সোনারগাঁ পৌরসভার বাসিন্দা আল মাহমুদ সানি জানান, পৌরসভার সড়কবাতিগুলো প্রায় এক বছর ধরে অচল পড়ে আছে, এতে রাতে পুরো এলাকা অন্ধকারে ডুবে থাকে। তিনি বলেন, “রাতে বিদ্যুৎ থাকে না, আবার সড়কবাতিও জ্বলে না। এতে মাদক ব্যবসা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি আরও বেড়ে গেছে। আমাদের সন্তানদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, শিশু ও বৃদ্ধরা গরমে ঘুমাতে পারছে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনারগাঁ জোনাল অফিসের (নারায়ণগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১) ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) খোরশেদ আলম জানান, “সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ট্রান্সফরমার চুরি হলে এলাকাবাসীকেই জরিমানা দিতে হবে। প্রথমবার অর্ধেক এবং দ্বিতীয়বার থেকে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে।”
চুরি রোধে করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসীকেই পাহারা দিতে হবে। পাশাপাশি, গভীর রাতে যেন বিদ্যুৎ না যায়, সে বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে কেন্দ্র করেই সংঘবদ্ধ চক্র এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই রাতের বেলা অঘোষিত লোডশেডিং বন্ধ করা, সড়কবাতি সচল করা এবং প্রশাসনের তদারকি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন তারা। একই সঙ্গে, ট্রান্সফরমার চুরির দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া আইনের সংস্কারও দাবি করেন স্থানীয়রা।



