ইসলাম ধর্ম

মহাবিশ্বের স্রষ্টার প্রাত্যহিক ব্যস্ততা: প্রতি মুহূর্তে তিনি নতুন শানে অধিষ্ঠিত

ইসলামিক ডেস্ক: মহাবিশ্বের সবকিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী। আসমান ও যমিনের সকল সৃষ্টি প্রতি মুহূর্তে তাঁর করুণা ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। তিনি প্রতি পলে তাঁর সৃষ্টিজগতের জন্য নতুন নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেন, যা ‘প্রাত্যহিক তাকদীর’ হিসেবে পরিচিত।

ঢাকা, বাংলাদেশ: মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণু এক সর্বশক্তিমান সত্তার নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। আসমান ও যমিনের অধিবাসীরা—সকলেই তাঁর অনুগ্রহ ও করুণার ভিখারী। পৃথিবীর মানুষেরা যেমন তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করে, তেমনি আসমানের অধিবাসীরাও তাঁর দয়া ও অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। এই সীমাহীন মহাবিশ্বে প্রতি মুহূর্তে চলছে স্রষ্টার এক অভাবনীয় কর্মযজ্ঞ।

প্রতিদিনের ঐশ্বরিক কর্মতৎপরতা

ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, আল্লাহ তা’আলা প্রতি মুহূর্তে তাঁর সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়। পবিত্র কুরআনের সূরা আর-রহমানের ২৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে, সবাই তাঁর কাছে প্রার্থী। তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত।”

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় প্রখ্যাত মুফাসসিরগণ বলেছেন, আল্লাহর এই “গুরুত্বপূর্ণ কাজ” বা “শান” হলো তাঁর সীমাহীন ও ধারাবাহিক কর্মতৎপরতা। এই বিষয়ে একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও স্পষ্টভাবে বর্ণনা দিয়েছেন। আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) এই আয়াতটি সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহর কাজের মধ্যে রয়েছে গুনাহ ক্ষমা করা, বিপদ থেকে উদ্ধার করা, একদলকে উন্নীত করা এবং অন্য দলকে অবনমিত করা।”

আল্লাহর প্রাত্যহিক তাকদীর

আল্লাহর এই দৈনন্দিন কর্মযজ্ঞকে ‘প্রাত্যহিক তাকদীর’ বলা হয়। এর অর্থ হলো, তিনি প্রতিদিন তাঁর বান্দাদের জন্য নতুন নতুন সিদ্ধান্ত নেন ও তা কার্যকর করেন। এই বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা যায়:

  • জীবন ও মৃত্যু: তিনি কাউকে জীবন দান করেন, আবার কারও মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করেন।
  • আরোগ্য ও অসুস্থতা: কাউকে রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন, আবার কাউকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য অসুস্থ করেন।
  • উত্থান ও পতন: কাউকে সম্মানিত করে শীর্ষাসনে পৌঁছান, আবার কাউকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেন।[2]
  • সৃষ্টি ও রূপদান: প্রতিনিয়ত তিনি নতুন নতুন শৈলী, আকার-আকৃতি ও গুণ-বৈশিষ্ট্য দিয়ে অসংখ্য বস্তু সৃষ্টি করছেন।

তাঁর সৃষ্টিজগৎ কখনোই স্থির থাকে না। প্রতিটি মুহূর্তেই পরিবর্তনশীল এবং স্রষ্টা প্রতিবারই একে একটি নতুন রূপে সজ্জিত করেন, যা আগের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

মূলত, মহাবিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টিই প্রতি মুহূর্তে আল্লাহর মুখাপেক্ষী। ক্ষমা, রহমত, আরোগ্য, রিজিক—সবকিছুর জন্যই সৃষ্টি তাঁর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনারত। এই অন্তহীন কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার প্রকাশ ঘটান। তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাঁকে প্রশ্ন করার অধিকার কারও নেই, বরং সকল সৃষ্টিই তাদের কর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button