যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, বিজিবি সদস্যের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর এক সদস্যের বিরুদ্ধে যৌতুক দাবি ও শারীরিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী স্ত্রী সুনিয়া আক্তার (১৮) একাধিক মামলা দায়ের করে বিচার ও নিরাপত্তার আবেদন করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, ২০২৩ সালের ২৮ এপ্রিল শরীয়াহ মোতাবেক সুনিয়া আক্তারের সঙ্গে শরীয়তপুরের জসিম উদ্দিন বেপারীর বিয়ে হয়। জসিম বর্তমানে বিজিবি ৬০ ব্যাটালিয়ন, সুলতানপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কর্মরত। বিয়ের সময় চার ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র দিলেও বিয়ের পরপরই তিনি ও তার পরিবার আট লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। মোটরসাইকেল কেনার জন্য দেওয়া টাকা আর ফেরত দেওয়া হয়নি।
সুনিয়ার অভিযোগ, যৌতুক না পেয়ে জসিম উদ্দিন নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। একপর্যায়ে ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি তাকে বাবার বাড়িতে ফেলে রেখে যান এবং স্পষ্ট করে দেন—যৌতুক ছাড়া আর ফিরিয়ে নেবেন না। এ ঘটনায় সখিপুর থানায় যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় মামলা (সি.আর. মামলা নং ৫২/২০২৫) দায়ের করেন তিনি।
মামলা দায়েরের পর গত ২২ মে আদালত থেকে ফেরার পথে জসিম ও সহযোগীরা সুনিয়া ও তার বাবার ওপর হামলা চালান। এ ঘটনায় তিনি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(গ)/৩০ ধারায় ভেদরগঞ্জ আদালতে আরেকটি মামলা (সি.আর. মামলা নং ৬২/২০২৫) দায়ের করেন। পরবর্তীতে চিকিৎসার জন্য ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে মেডিকেল রিপোর্টে তার শরীরে শারীরিক আঘাতের প্রমাণ মেলে।
সুনিয়া অভিযোগ করেন, তার স্বামী প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেন—“আমি সরকারি চাকরি করি, তোরা কিছুই করতে পারবি না। আদালতও আমার কিছু করতে পারবে না।” এ ধরনের বক্তব্যকে তিনি রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধানের প্রতি অবজ্ঞা এবং বিজিবির ভাবমূর্তির জন্য হুমকি বলে মনে করেন।
আইনজীবী গোবিন্দ প্রামাণিক বলেন, “একজন শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর। দ্রুত তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
পাশের বাড়ির এক নারী জানান, “প্রতিদিন নির্যাতন করত জসিম। মনে হতো নেশাগ্রস্ত।” এক দোকানদার ও ভুক্তভোগীর বড় ভাইও নিয়মিত নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ভাইয়ের অভিযোগ—জসিম অনলাইন জুয়ায় জড়িত ছিল এবং টাকার জন্য বোনকে নির্যাতন করত।
সুনিয়া আক্তার বিজিবি সদর দপ্তরে আবেদন করে স্বামীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিভাগীয় তদন্ত ও সাময়িক বরখাস্তের দাবি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে সক্রিয় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জসিম উদ্দিন বেপারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এখন প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—রাষ্ট্রের শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী কি নিরপেক্ষ তদন্ত করে আইন ও ন্যায়বিচারের প্রতি জনগণের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখবে, নাকি ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যাবে?



