এক টুকরো খেজুরের দান: যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন মহানবী (ﷺ)
সুনানে নাসাই শরিফের এক বর্ণনায় উঠে এসেছে দান, সুপারিশ এবং উত্তম প্রথা চালুর অসাধারণ ফজিলত, যা আজও মুসলিম উম্মাহর জন্য পথপ্রদর্শক।
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: ইসলামে দান বা সাদাকার গুরুত্ব অপরিসীম। এটি কেবল অসহায় মানুষের প্রতি অনুগ্রহ নয়, বরং নিজের সম্পদকে পবিত্র করার এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। সম্প্রতি সুনানে নাসাই শরিফে বর্ণিত একটি হাদিস আবারও আলোচনায় এসেছে, যেখানে দেখা যায়, অনাহারক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট দেখে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্যের হাত বাড়াতে সাহাবিদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য রাসূলের (ﷺ) বেদনা
বিশিষ্ট সাহাবি জারীর (রা.) বর্ণনা করেন, এক দুপুরে তাঁরা রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে প্রায় পোশাকবিহীন, খালি পায়ের একদল মানুষ উপস্থিত হন, যাদের গলায় তলোয়ার ঝুলছিল। তাঁরা ছিলেন ‘মুদার’ গোত্রের সদস্য এবং চরম দারিদ্র্য ও অনাহারের শিকার। তাদের এই করুণ অবস্থা দেখে মানবতার মুক্তির দূত, মহানবী (ﷺ)-এর মুখমণ্ডল বেদনায় বিবর্ণ হয়ে যায়। তিনি দ্রুত সালাতের আয়োজন করেন এবং এক মর্মস্পর্শী খুতবা দেন।
খুতবা এবং দানের প্রতি উদাত্ত আহ্বান
সালাত শেষে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) পবিত্র কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এরপর তিনি উপস্থিত সাহাবিদের নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী দান করার জন্য আহ্বান জানান। তিনি বলেন:
“প্রত্যেকেই তার দিনার, দিরহাম, কাপড়, এক সা’ গম বা এক সা’ খেজুর থেকে সাদাকা করো।”
দানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, “এক টুকরো খেজুর হলেও দান করো।” এই একটি বাক্যই সাহাবিদের অন্তরকে নাড়া দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
সাহাবিদের অভূতপূর্ব সাড়া ও উত্তম প্রথার পুরস্কার
রাসূল (ﷺ)-এর আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন আনসারী সাহাবি এত পরিমাণ সাদাকা নিয়ে আসেন যে, তা বহন করা তাঁর জন্য কষ্টসাধ্য ছিল। তাঁর দেখাদেখি অন্য সবাই নিজেদের ঘর থেকে খাদ্য, বস্ত্রসহ নানা সামগ্রী এনে জমা করতে শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে খাদ্য ও কাপড়ের দুটি বিশাল স্তূপ তৈরি হয়ে যায়।
এই দৃশ্য দেখে মহানবী (ﷺ)-এর চেহারা পুনরায় খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তখন তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক যুগান্তকারী ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ বা উত্তম প্রথা চালু করবে, সে নিজে যেমন সওয়াব পাবে, তেমনি যত মানুষ সেই ভালো কাজ অনুসরণ করবে, তাদের সকলের সমপরিমাণ সওয়াবও সে লাভ করবে। একইভাবে, যে ব্যক্তি কোনো মন্দ প্রথা চালু করবে, সে তার নিজের গুনাহের পাশাপাশি সকল অনুসরণকারীর গুনাহের ভাগীদার হবে।
এমন সময় আসবে, যখন সাদাকা নেওয়ার লোক থাকবে না
অন্য একটি হাদিসে (২৫৫৭), রাসূল (ﷺ) ভবিষ্যতের প্রাচুর্যের কথা উল্লেখ করে সাদাকা করার জন্য উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ দান করার জন্য সম্পদ নিয়ে ঘুরবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মতো কোনো অভাবী মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। এটি মূলত প্রাচুর্যের নিদর্শন এবং সময় থাকতে দান করার প্রতি এক বিশেষ তাগিদ।
সৎকাজের সুপারিশেও রয়েছে সওয়াব
শুধু নিজে দান করাই নয়, অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করা বা সুপারিশ করার মধ্যেও রয়েছে পুরস্কার। অপর একটি বর্ণনায় (২৫৫৮) রাসূল (ﷺ) বলেন, “তোমরা সৎকাজের জন্য সুপারিশ করো, এর জন্য তোমাদের সওয়াব দেওয়া হবে।” এর মাধ্যমে তিনি শিখিয়েছেন যে, একটি কল্যাণকর সমাজ গঠনে প্রত্যেকের ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে।
এই হাদিসগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইসলাম কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের ধর্ম নয়, এটি একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা যা মানুষের প্রতি মানুষের সহানুভূতি, সহযোগিতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করে।



