অপরাধএক্সক্লুসিভদুর্নীতিবাংলাদেশবিশ্লেষণলক্ষ্মীপুর

৫ আগস্ট পরবর্তী চন্দ্রগঞ্জে চাঁদাবাজি: প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

বিশেষ প্রতিনিধি: ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ এলাকায় চিহ্নিত চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে শত শত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন বা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়দের মতে, চাঁদাবাজরা বিভিন্ন উপায়ে ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিয়মিত অর্থ আদায় করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “প্রতিদিনই কোনো না কোনো ব্যবসায়ীকে হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করা হচ্ছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।”

আশ্চর্যজনকভাবে, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো অত্যন্ত স্পষ্ট এবং ভুক্তভোগীরা বারবার অভিযোগ জানালেও প্রশাসন কিংবা রাজনৈতিক নেতৃত্ব—কারো পক্ষ থেকেই সরাসরি কোনো হস্তক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। এই নীরবতা স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করেছেন:

  • রাজনৈতিক ছত্রছায়া: চাঁদাবাজদের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের গোপন আঁতাত বা সংযোগ থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
  • প্রমাণের অভাব: যদিও অভিযোগের সংখ্যা অনেক, তবে যথাযথ প্রমাণের অভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বিলম্ব হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
  • দলীয় নিষ্ক্রিয়তা: অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয় না।

এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। এক ভুক্তভোগী বলেন, “অভিযোগ তো অনেকবার করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি। এতে চাঁদাবাজদের ভয়ও কমছে না, বরং দিন দিন বাড়ছে।”

কলেজপড়ুয়া এক শিক্ষার্থী নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, “এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কেউ এগিয়ে আসতে চাইছে না। কারণ, সবাই জানে যে প্রতিবাদ করলে তার দায় নিজের ওপরই এসে পড়বে।”

চন্দ্রগঞ্জে চাঁদাবাজির এই চলমান পরিস্থিতি শুধুমাত্র অপরাধীদের উৎসাহিত করছে না, বরং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনের শাসনের প্রতি আস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কার্যকর পদক্ষেপের অভাবই এই সমস্যার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে চন্দ্রগঞ্জে চাঁদাবাজির এই অপসংস্কৃতি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে এবং এলাকার সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।


Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button