মামলা স্থানান্তর: ন্যায়বিচার নিশ্চিতে আপনার আইনগত অধিকার ও করণীয়
ডেস্ক রিপোর্ট: আইনের চোখে সবাই সমান এবং ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু চলমান কোনো মামলায় যদি বিচারপ্রার্থী অনুভব করেন যে তিনি পক্ষপাতিত্ব বা অন্য কোনো কারণে ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তখন আইন তাকে মামলাটি অন্য আদালতে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটিই আইনত “মামলা বদলি” বা “মামলা স্থানান্তর” নামে পরিচিত।
মামলা স্থানান্তর কী এবং কেন প্রয়োজন?
কোনো একটি মামলা এক আদালত থেকে অন্য কোনো সম-এখতিয়ারের আদালতে কিংবা এক বিচারিক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়াকেই মামলা বদলি বলা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিচারিক স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। যখন কোনো বিচারপ্রার্থী মনে করেন যে বর্তমান আদালতে মামলা চলমান থাকলে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না, তখনই এই আইনি প্রতিকার চাওয়া হয়।
কখন মামলা বদলির আবেদন করা যায়?
যেকোনো মামলাই চাইলেই স্থানান্তর করা যায় না। এর জন্য আবেদনকারীকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট, যৌক্তিক এবং অকাট্য কারণ আদালতে উপস্থাপন করতে হয়। মূলত, জরুরি পরিস্থিতি বা বিশেষ প্রয়োজনে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায়। যেসব কারণে মামলা স্থানান্তরের আবেদন করা যেতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হলো:
- আদালতের পক্ষপাতিত্বের শিকার হলে বা হওয়ার আশঙ্কা থাকলে।
- মামলা চলাকালীন কোনো পক্ষের দ্বারা অযাচিত হয়রানি বা হুমকির সম্মুখীন হলে।
- বর্তমান আদালতে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জোরালো প্রমাণ থাকলে।
- অন্য কোনো যৌক্তিক কারণে ন্যায়বিচার ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে।
আবেদন করবেন কোন আদালতে?
মামলা স্থানান্তরের এখতিয়ার দুটি ভিন্ন আদালতের রয়েছে:
১. দায়রা জজ আদালত: ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল মামলা যদি একই বিভাগের অধীন এক আদালত থেকে অন্য কোনো আদালতে স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়, তবে দায়রা জজ আদালতে আবেদন করতে হয়।
২. হাইকোর্ট বিভাগ: যখন মামলাটি এক বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কোনো বিভাগে স্থানান্তরিত করার প্রয়োজন হয়, তখন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে আবেদনকারীকে অকাট্যভাবে প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং সুবিচারের জন্যই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এ বিষয়ে মতামত দিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাওহিদা বিনতে রহমান আঁখি। তিনি জানান, “মামলা স্থানান্তর বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারকে সুরক্ষিত করে। তবে এই সুবিধার অপব্যবহার রোধে আদালত সবসময় আবেদনের কারণগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করে থাকেন।”



