দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত ও পদ্ধতি
ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: আল্লাহর কাছে বান্দার আকুতি জানানোর সর্বোত্তম মাধ্যম হলো দোয়া। বিশ্বাসীদের জন্য এটি এমন এক হাতিয়ার, যা ভাগ্য পরিবর্তনেও সক্ষম হতে পারে। তবে দোয়া কবুল হওয়ার জন্য প্রয়োজন একনিষ্ঠ বিশ্বাস এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা। মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রার্থনার জন্য কিছু বিশেষ সময় ও পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যখন দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে।
দোয়ার পূর্বশর্ত
যেকোনো দোয়া করার আগে দুটি বিষয় নিশ্চিত করা আবশ্যক। প্রথমত, যা চাওয়া হচ্ছে, তার প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং দ্বিতীয়ত, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা। মনে সামান্যতম সংশয় রেখে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
দোয়া কবুলের সেরা সময় ও অবস্থা
ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, কিছু মুহূর্ত ও অবস্থায় দোয়া বিশেষভাবে কবুল হয়। নিচে এমন কিছু সময় ও অবস্থার উল্লেখ করা হলো:
১. তাহাজ্জুদের সময়: রাতের শেষ ভাগে, বিশেষ করে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে যে দোয়া করা হয়, তা আল্লাহর দরবারে দ্রুত কবুল হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত (জুমার রাত) এক্ষেত্রে আরও বেশি ফজিলতপূর্ণ।
২. সিজদারত অবস্থায়: বান্দা যখন সিজদায় থাকে, তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তাই সিজদারত অবস্থায় কৃত দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
৩. জুমার দিন: জুমার দিন আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত সময়টি দোয়া কবুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪. ফরজ নামাজের পর: প্রত্যেক ফরজ সালাত আদায়ের পর দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সুযোগ থাকে।
৫. আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়: আজান ও ইকামতের মাঝের সময়ে করা দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।
৬. বৃষ্টির সময়: বৃষ্টি বর্ষণের সময় দোয়া করা হলে তা কবুল হওয়ার জোরালো সম্ভাবনা থাকে।
৭. কদরের রাতে: হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত, লাইলাতুল কদরে করা দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়।
৮. রোজা রাখা অবস্থায়: রোজাদার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে কবুল করেন।
৯. সফর বা ভ্রমণকালে: মুসাফির বা ভ্রমণরত অবস্থায় বান্দার দোয়া আল্লাহ কবুল করেন।
১০. জুমার খুতবার মাঝে: জুমার নামাজের খুতবার দুই অংশের মাঝখানে ইমাম যখন অল্প সময়ের জন্য বসেন, তখন দোয়া করলে তা কবুল হয়।
বিশেষ আমলের মাধ্যমে দোয়া
কিছু নির্দিষ্ট আমলের মাধ্যমেও দোয়া কবুল হওয়ার পথ সহজ হয়। যেমন:
- আল্লাহর গুণবাচক নামে: আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ, বিশেষ করে ‘ইসমে আজম’-এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।
- দরুদ ও ইস্তিগফার: দোয়ার আগে ও পরে বেশি বেশি দরুদ পাঠ এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার) করলে দোয়া কবুল হয়।
- কুরআন তিলাওয়াত: বিশুদ্ধ নিয়তে সূরা ইয়াসিন ও সূরা আর-রহমানের মতো ফজিলতপূর্ণ সূরা তিলাওয়াত করে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার আশা করা যায়।
- সৎকাজের উসিলা: নিজের যেকোনো ভালো কাজের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন।
গুরুত্বপূর্ণ দ্রষ্টব্য:
আলেমদের মতে, যেকোনো দোয়া বা আমল আল্লাহর দরবারে পৌঁছানোর জন্য এর শুরুতে ও শেষে দরূদ শরিফ পাঠ করা অপরিহার্য। এটি দোয়ার অন্যতম আদব এবং কবুল হওয়ার শর্ত।



