অন্যান্যঅপরাধঅব্যাবস্থাপনাঢাকা বিভাগ

টঙ্গীর এরশাদ নগর বস্তি এখন যুব সমাজ ধ্বংসের কারখানা,চলছে প্রকাশ্যে মাদক  

বৈরাম খাঁ : সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যখন দুর্নীতির বিষবাষ্প, তখন গাজীপুরের টঙ্গীতে মাদকের হিংস্র থাবায় জর্জরিত একটি আস্ত জনপদ। দেশের উন্নতি, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার প্রধান অন্তরায় এই দুর্নীতি ও মাদকের ছোবল থেকে মুক্তি মিলছে না রাজধানীর নিকটবর্তী এই শিল্পাঞ্চলের। টঙ্গীর ব্যাংক মাঠ বস্তি এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিটি মুহূর্ত কাটাচ্ছে আতঙ্কে—এই বুঝি তার আদরের সন্তান মাদকাসক্ত হয়ে পড়ল!

অভিযোগের তীর গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাংক মাঠ বস্তির আরফিনা বেগম, যিনি এলাকাবাসীর কাছে ‘রানী’, ‘বড় আপা’ বা ‘জামালের বউ’ নামে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসার আড়ালে গড়ে তুলেছেন এক মাদকের বিশাল হাট।

স্থানীয়দের মতে, টঙ্গীর কোথাও ফেনসিডিল না পাওয়া গেলেও ‘বড় আপা’ আরফিনার কাছে তা সহজলভ্য। তার এই অবৈধ মাদক ব্যবসায় স্বামী জামাল ও ভাই শ্রাবণ সক্রিয় সহযোগী হিসেবে কাজ করে। উ

দ্বেগজনক বিষয় হলো, গত প্রায় ছয়-সাত বছরেও টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ তাকে একবারও গ্রেপ্তার করতে পারেনি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। সম্প্রতি, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জাতীয় সাপ্তাহিক ‘অপরাধ বিচিত্রা’র একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে আরফিনার পালিত সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তির বাসিন্দারা জানান, আরফিনার এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসাটি মূলত তার মাদক কারবারের একটি আবরণ মাত্র। তাদের অভিযোগ, পুলিশের একাংশ এবং কিছু প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়াতেই বছরের পর বছর ধরে নির্বিঘ্নে এই মাদক সম্রাজ্ঞী তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

টঙ্গী পূর্ব থানা থেকে ব্যাংক মাঠ বস্তির দূরত্ব মাত্র কয়েকশ গজ। এত কাছে থেকেও প্রশাসনের এই নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। ইতিপূর্বে একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় গণমাধ্যমে আরফিনার মাদক ব্যবসা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।

এই বিষয়ে অভিযুক্ত মাদক ব্যবসায়ী আরফিনার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়, ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে, টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, “আমাদের থানা এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত আছে। মাদক উদ্ধার করা না গেলে কাউকে গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে আইনি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে বস্তির মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ চলছে এবং খুব শিগগিরই বড় ধরনের অভিযান পরিচালনা করা হবে।”

তিনি আরও জানান, বস্তির একাধিক মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং তাদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।

তবে এলাকাবাসীর মনে একটাই প্রশ্ন—যার বিরুদ্ধে এত গুরুতর অভিযোগ, প্রশাসন কি ইচ্ছাকৃতভাবেই তার বিরুদ্ধে নীরব? ‘বড় আপা’ আরফিনার গ্রেপ্তার না হওয়ার পেছনে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে, তা খতিয়ে দেখতে জোর দাবি জানিয়েছে এলাকার সচেতন মহল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button