ইসলাম ধর্ম

নামাজের পর করণীয় গুরুত্বপূর্ণ আমল

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ নামাজের পর কিছু সময় জিকির ও দোয়া করা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে নামাজের পর বিভিন্ন দোয়া ও তাসবিহ পাঠ করতেন এবং সাহাবাদেরও তা শিক্ষা দিতেন। এসব আমলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং অশেষ সওয়াব হাসিল হয়। নিচে নামাজের পর পঠিতব্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল তুলে ধরা হলো।

১. ক্ষমা প্রার্থনা (ইস্তিগফার):
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিনবার ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই) পাঠ করতেন।] এটি আল্লাহর কাছে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার একটি সহজ ও কার্যকর উপায়।

২. আল্লাহর প্রশংসা ও শান্তির দোয়া:
ইস্তিগফারের পর রাসূল (সা.) এই দোয়াটি পড়তেন: “আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকاس সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম।” এর অর্থ, “হে আল্লাহ! তুমিই শান্তিময়, তোমার থেকেই শান্তি আসে। তুমি বরকতময়, হে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী।”

৩. তাসবিহ, তাহমিদ ও তাকবির পাঠ:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ (আল্লাহ পবিত্র), ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (সকল প্রশংসা আল্লাহর) এবং ৩৩ বার ‘আল্লাহু আকবার’ (আল্লাহ মহান) পাঠ করবে এবং শতবার পূর্ণ করার জন্য একবার “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির” পড়বে, তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমতুল্য হয়।

৪. আয়াতুল কুরসি পাঠের ফজিলত:
নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি (সূরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াত) পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না। এটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল, যা পাঠে এক মিনিটেরও কম সময় লাগে।

৫. জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া:
ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর সাতবার “আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার” (হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন) পাঠ করলে, যদি ওই দিন বা রাতে মৃত্যু হয়, তবে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন বলে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে।

৬. সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ তিন সূরা:
ফজর ও মাগরিবের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস প্রতিটি তিনবার করে পাঠ করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, সকাল-সন্ধ্যায় এই সূরাগুলো পাঠ করলে তা সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে।

৭. দরুদ শরিফ পাঠ:
ফজর ও মাগরিবের নামাজের পর ১০ বার দরুদ শরিফ পাঠ করলে কিয়ামতের দিন রাসূল (সা.)-এর শাফায়াত বা সুপারিশ নসিব হবে।দরুদ পাঠ নবী (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম মাধ্যম।

৮. আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণা:
ফজর ও মাগরিবের পর তিনবার “রাদ্বীতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা” পাঠ করার ফজিলত অপরিসীম। এর অর্থ, “আমি আল্লাহকে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে এবং মুহাম্মদ (সা.)-কে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।” রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এটি পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে সন্তুষ্ট করবেন এবং হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

৯. সগিরা গুনাহ মাফের আমল:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” (আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি) পাঠ করবে, তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমান হয়। (বুখারী: ৬৪০৫, মুসলিম: ২৬৯১)

এই আমলগুলো নিয়মিতভাবে পালন করার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে অশেষ কল্যাণ লাভ করতে পারে। আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমলগুলো সঠিকভাবে পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button