গভীর রাতের ইবাদত তাহাজ্জুদ: আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ

ইসলামিক বিচিত্রা ডেস্ক: নফল ইবাদতের মধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজকে সর্বোত্তম হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি এমন এক বিশেষ ইবাদত, যা বান্দাকে মহান আল্লাহর কাছাকাছি হওয়ার সুযোগ করে দেয়। গভীর রাতে, যখন সমগ্র পৃথিবী নিদ্রায় মগ্ন, তখন মুমিন বান্দা ঘুম ত্যাগ করে স্রষ্টার সামনে দাঁড়ান এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রার্থনা করেন।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে গুরুত্ব
কুরআন ও হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ মর্যাদা ও গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন: ‘কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দান করব? কে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব?’” (সহিহ বুখারী ও মুসলিম)।
এই নামাজকে জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, “হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, অন্যকে খাবার খাওয়াও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো এবং রাতের গভীরে মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাজ আদায় করো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” (তিরমিযী)।
পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের গুণাবলী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “তাদের পিঠ বিছানা থেকে আলাদা থাকে (অর্থাৎ তারা তাহাজ্জুদের জন্য শয্যা ত্যাগ করে)।” (সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৬)।
নামাজের সময় ও রাকাত সংখ্যা
ইশার নামাজের পর থেকে শুরু করে ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা যায়। তবে এর সবচেয়ে উত্তম সময় হলো রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। ঘুম থেকে জেগে উঠে এই নামাজ আদায় করা অধিক ফজিলতপূর্ণ। যদি রাতে ওঠা কঠিন বলে মনে হয়, তবে ইশার নামাজের পর এবং বিতর নামাজের পূর্বেও তা আদায় করা যেতে পারে।
তাহাজ্জুদের নির্দিষ্ট কোনো রাকাত সংখ্যা নেই। সর্বনিম্ন দুই রাকাত থেকে শুরু করে সাধারণত আট বা বারো রাকাত পর্যন্ত পড়া হয়। রাসূল (সা.) প্রায়শই আট রাকাত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন।
নামাজ আদায়ের নিয়ম
অন্যান্য নফল নামাজের মতোই দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ আদায় করতে হয়। মনে মনে “আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করছি” বলে নিয়ত করতে হবে। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর কুরআন থেকে দীর্ঘ কেরাত পাঠ করা উত্তম, তবে ছোট সূরা দিয়েও নামাজ আদায় করা যাবে। নামাজ শেষে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন, গুনাহ মাফ এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য দোয়া করা উচিত, কারণ এ সময়ে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
মূলত, তাহাজ্জুদ নামাজ হলো স্রষ্টার সাথে বান্দার এক গভীর ও নিবিড় কথোপকথনের মাধ্যম। এটি আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, প্রশান্তি দান করে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়াতে সাহায্য করে। নিয়মিত আদায়ের মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভে ধন্য হতে পারেন।



