মাদকের স্বর্গরাজ্য ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ সীমান্ত: প্রশাসনের কঠোর অবস্থানের আশ্বাস

বিশেষ প্রতিনিধি: ঢাকা ও মুন্সিগঞ্জের সীমান্তবর্তী কয়েকটি ইউনিয়ন এখন মাদকের ভয়াবহ আখড়ায় পরিণত হয়েছে। ভৌগোলিক সীমানার সুযোগ নিয়ে শ্রীনগরের বাড়ৈখালী, হাঁসাড়া; নবাবগঞ্জের চুড়াইন, গালিমপুর, আগলা এবং সিরাজদিখানের শেখরনগর ও চিত্রকোর্ট ইউনিয়নে মাদক ব্যবসায়ীরা এক অপ্রতিরোধ্য নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। মাদকের ভয়াল থাবায় সম্প্রতি বাড়ৈখালীতে তিনজনের মৃত্যু হলেও স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতার অভাব প্রকট।
এলাকাভিত্তিক মাদক ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাড়ৈখালী ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের শাকিল (৩০) দিনে ১০০ থেকে ১৫০ পিস ইয়াবা বিক্রি করে। বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ একবার ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে এসে সে পুনরায় ব্যবসা শুরু করে। এলাকাবাসী তাকে আটক করার চেষ্টা করলে, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিষাক্ত মদ পানে এক অটোচালকের নাবালক পুত্রের মৃত্যুর ঘটনাতেও তার নাম উঠে আসে।
একই ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মোঃ রাহাত (২৮) প্রায় এক দশক ধরে অটোচালক পরিচয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে। তার বিরুদ্ধে মাদক ও চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে জনতার হাতে ইয়াবাসহ আটক হলেও স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে সে বারবার পার পেয়ে যায় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
শ্রীধরপুরের মাটি ব্যবসায়ী আলামিন (৩৫), দিল মোহাম্মদ (৩৮) এবং কসাই শামীম (৩৫) মিলে একটি চক্র গড়ে তুলেছে, যার মূল হোতা হিসেবে খাহ্রা গ্রামের ইমরান ওরফে জগা এবং তার ভাগিনা জুম্মানের (২২) নাম শোনা যায়।

শিবরামপুরের মাদকের হাট ও অপরাধ জগৎ
৩ নং ওয়ার্ডের শিবরামপুরে সেলিম ওরফে কাইলা সেলিম এবং তার শ্যালক সিফাত (২৬) বছরের পর বছর ধরে প্রকাশ্যে মাদকের হাট বসিয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর মতে, মাদক বিক্রি করে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে এবং এলাকায় ঘটে যাওয়া কোটি কোটি টাকার গরু চুরির ঘটনার সাথেও তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পুরনো কিছু মাদক ব্যবসায়ী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নতুন মাদক কারবারিদের সুরক্ষা দিয়ে আসছে, যার ফলে ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।
অন্যান্য শীর্ষ মাদক কারবারিরা
শ্রীধরপুরের আরেক শীর্ষ ইয়াবা ও গাঁজা ব্যবসায়ী আলমাস। পূর্বে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করলেও সে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। সম্প্রতি সে এলাকায় ফিরে এসে আবারও পাইকারি ও খুচরা মাদক ব্যবসা শুরু করেছে।
পুলিশের বক্তব্য
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ শামসুল আলম সরকার বলেন, “আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এটি উপদেষ্টার এলাকা। মাদক নির্মূলে সামাজিক সচেতনতা জরুরি। এ ব্যাপারে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”



