
অপরাধ বিচিত্রা ডেস্ক: সাইবার জগতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। ‘ঘরে বসে আয়’ বা ‘বিনিয়োগে দ্বিগুণ লাভ’-এর মতো লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে সাধারণ মানুষের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি এমনই এক প্রতারণার শিকার হয়ে ৩৫ লাখ টাকা খুইয়েছেন শফিক (ছদ্মনাম) নামের এক যুবক। এই ঘটনা সাইবার প্রতারণার ভয়াবহতাকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
যেভাবে পাতা হয় প্রতারণার ফাঁদ
প্রতারণার শুরুটা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো একটি নিরীহ বার্তা দিয়ে। বার্তাটিতে অল্প সময়ে বিপুল অর্থ উপার্জনের লোভনীয় প্রস্তাব থাকে। শফিকের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
- প্রথম ধাপ: বিশ্বাস অর্জন
প্রথমে শফিককে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করা হয়, যার নাম ছিল “VIP Investment Group”। সেখানে তাকে ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কথামতো বিনিয়োগ করে তিনি লাভসহ ১৫ হাজার টাকা ফেরতও পান। প্রতারক চক্রের নারী প্রতিনিধিরা অনবরত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং গ্রুপের অন্য সদস্যদের বিপুল অর্থ লাভের ভুয়া রিভিউ দেখিয়ে তার বিশ্বাস অর্জন করে নেয়। - দ্বিতীয় ধাপ: বড় অঙ্কের বিনিয়োগে প্রলুব্ধ করা
বিশ্বাস অর্জনের পর প্রতারকরা তাদের মূল ছক কষা শুরু করে। এবার শফিককে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আগের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি সহজেই সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেন এবং ১ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন। - তৃতীয় ধাপ: চাপ ও ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়
টাকা পাঠানোর পরই শুরু হয় আসল প্রতারণা। শফিককে জানানো হয়, তার লাভসহ মূলধন আটকে গেছে এবং তা ছাড়াতে হলে ‘ট্যাক্স’ বাবদ আরও টাকা দিতে হবে। এরপর বলা হয়, অ্যাকাউন্ট ‘লক’ হয়ে গেছে এবং তা ‘আনলক’ করতে ৫ লাখ টাকা লাগবে। এক পর্যায়ে ‘ভিআইপি সদস্য’ হওয়ার কথা বলে আরও ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। আগের টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় এবং প্রতারকদের চাপের মুখে পড়ে শফিক ধাপে ধাপে তাদের বিভিন্ন ব্যাংক ও মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাকাউন্টে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠিয়ে দেন।
শেষ পরিণতি
সম্পূর্ণ টাকা পাঠানোর পর হঠাৎ করেই সেই টেলিগ্রাম গ্রুপটি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং গ্রুপের অ্যাডমিনরা শফিককে ব্লক করে দেয়। প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে শফিক ততক্ষণে তার জীবনের প্রায় সব সঞ্চয় হারিয়ে ফেলেছেন।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের প্রতারণার ক্ষেত্রে প্রতারকরা মানুষের লোভ এবং ভয়কে পুঁজি করে। একবার কেউ তাদের ফাঁদে পা দিলে, আগের বিনিয়োগ হারানোর ভয়ে সে আরও টাকা পাঠাতে বাধ্য হয়।
এই ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচতে তারা কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন:
- অস্বাভাবিক লাভের প্রস্তাব এড়িয়ে চলুন: মনে রাখবেন, পরিশ্রম ছাড়া বা রাতারাতি কোনো বিনিয়োগ দ্বিগুণ হয় না।
- অপরিচিত গ্রুপে বিনিয়োগ নয়: কোনো অপরিচিত ব্যক্তি বা অনলাইন গ্রুপের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে টাকা পাঠাবেন না।
- আলোচনা করুন: যেকোনো বড় আর্থিক সিদ্ধান্তের আগে পরিবার বা অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
- বৈধ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করুন: নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সরকার অনুমোদিত ব্যাংক, বিমা বা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বেছে নিন।
- অন্যকে সচেতন করুন: নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, চেক বা কার্ডের তথ্য কারও সঙ্গে শেয়ার করবেন না এবং অন্যকেও এ বিষয়ে সতর্ক করুন।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, এ ধরনের প্রতারণার শিকার হলে কালক্ষেপণ না করে দ্রুত নিকটস্থ থানা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। জনসচেতনতাই পারে এ ধরনের অপরাধ রুখে দিতে।



