কর কর্মচারীর বিরুদ্ধে সম্পদের পাহাড় গড়ার অভিযোগ
ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির তদন্ত চায় বিশেষজ্ঞ মহল
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কর অঞ্চল-১৪-এর কর্মচারী লায়ন বি. এম. সাইদুজ্জামান (সবুজ)-এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও তার নামে-বেনামে প্রায় ১৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আবাসন প্রকল্প এবং নির্মাণাধীন শপিং কমপ্লেক্সের মালিকানার তথ্য পাওয়া গেছে, যা তার পদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
অভিযোগের বিস্তারিত
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইদুজ্জামান তার বাবা আদিল উদ্দীনের মাধ্যমে তদবির করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এমএলএসএস পদে যোগ দেন এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হন। অভিযোগ রয়েছে, এরপর থেকেই তিনি রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- এট ওয়েল ব্রিজ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর
- এট ওয়েল কটন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
- ড্রাগন ফোর্স সিকিউরিটি লিমিটেড
- ওয়েল সার্জিক্যাল অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
- গোল্ড এগ্রো লিমিটেড ও গোল্ড হ্যাচারি অ্যান্ড ফিশারিজ লিমিটেড
- এস-টি কর্পোরেশন
- সবুজ বাংলা রেস্টুরেন্ট
- গ্রিন ঢাকা (রেন্ট-এ-কার)
- রাজধানী বস্ত্র বিতান অ্যান্ড ফ্যাশন হাউজ
এছাড়াও তিনি ঢাকার সাভারের আমিনবাজারে “ঢাকা ইকো গার্ডেন সিটি” নামে একটি হাউজিং প্রকল্পের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং প্রকল্পটি তার বাবা আদিল উদ্দীনকে দিয়ে পরিচালনা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ
অনুসন্ধানে আরও অভিযোগ উঠেছে যে, সাইদুজ্জামানের বাবা আদিল উদ্দীন মোহাম্মদপুর ফার্টিলিটি অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত অবস্থায় নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলির নামে ঘুষ গ্রহণসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। এই অর্থ দিয়ে তারা রাজধানীর বছিলায় সিলিকন সিটিতে এক একর জমির ওপর “এম এম শপিং কমপ্লেক্স” নির্মাণ করছেন, যার পরিচালক হিসেবে সাইদুজ্জামানের মা সালমা আদিলের নাম রয়েছে। আইন অনুযায়ী, এটি সরকারি চাকরিবিধিমালা, ১৯৭৯-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
রাজনৈতিক ভোল পাল্টানোর অভিযোগ
সাইদুজ্জামানের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভোল পাল্টানোর অভিযোগও উঠেছে। গত জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তিনি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন দমনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ক্ষমতার পালাবদলের পর, ৫ আগস্ট তিনি গণভবনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পতাকা হাতে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেন, যা তার রাজনৈতিক অবস্থান বদলের কৌশল হিসেবে দেখা হচ্ছে। তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে “ভরসা রাখুন নৌকায়”-এর মতো পোস্ট তার পূর্বের রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, লায়ন বি. এম. সাইদুজ্জামান ও তার বাবা আদিল উদ্দীনের অর্জিত বিপুল সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দ্রুত তদন্ত করা উচিত।



